বাংলার ভোট বাজারে সারদা কেলেঙ্কারি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে বড় ইস্যু
সারদা কেলেঙ্কারির সঙ্গে নাম জড়িয়েছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা দলের পলিটব্যুরো সদস্য বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য অভিযোগ তুলেচিলেন যে সারদা গোষ্ঠী রাজ্যের লক্ষ লক্ষ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন, সেই সারদা গোষ্ঠীর প্রতীক মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। সিপিএম সারদা কাণ্ডে সিবিআই তদন্তেরও অভিযোগ জানিয়েছে।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর অভিযোগ, "এই কেলেঙ্কারি কয়েক হাজার কোটি টাকার। এই টাকা কোথায় গেল? কার কাছে গেল? সবকিছু বেরিয়ে আসবে। তৃণমূল কংগ্রেস সততার কথা বলে। অথচ এই সরকার মিথ্যার সরকার। যা সংবাদে রোজ দেখছি, তার ভিত্তিতেই বলছি, এ সরকার সারদা কেলেঙ্কারির প্রতীক হতে পারে, কিন্তু সততার নয়। সেই দিন দূরে নেই যখন এই সরকার ধসে পড়বে।"
তৃণমূল তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে নিয়ে বিজেপিও কড়া মন্তব্য করতে কোনও কসর রাখছেন না। টাকার হেরাফেরি করার জন্য যে একের পর এক জালিয়াত সংস্থা ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে তার জন্য বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ শাখার সভাপতি রাহুল সিনহা তৃণমূল কংগ্রেসকেই দায়ী করেছেন। কংগ্রেস ও সিপিএমের সঙ্গে সুর মিলিয়ে সারদা কাণ্ডে বিজেপিও সিবিআই তদন্তের দাবী করেছে।
যদিও রাজ্যসভা সিবিআই তদন্তের বিরোধীতা করে এসেছে। এখন সারদা ইস্যুকে হাতিয়ার করে তৃণমূল কংগ্রেসকে বাকি দলগুলি কোণঠাসা করতে চাইছে বলে মনে তকছে তৃণমূল। রাজ্যসভা সাংসদ তথা ডেরেক ও'ব্রায়েন বলেন, পঞ্চায়েত ও উপনির্বাচনের আগেও এই একই ইস্যুতে সরব হয়েছিল বিরোধী দলগুলি। কিন্তু তাতে কী লাভ হয়েছে? তৃণমূল জিতেছে। বাংলার মানুষ বুদ্ধিমান। তারা জানেন কী করতে হবে। ডেরেকের পাশাপাশি একক কেন্দ্রীয় সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের সারদা মামলায় হস্তক্ষেপ প্রসঙ্গে অমিত মিত্ররও অভিযোগ, তৃণমূলকে কোণঠাসা করতে এটা একটা রাজনৈতিক পদক্ষেপ।
কলকাতার সিটি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, এ নিয়ে কোনও দ্বিমতই নেই যে সারদা পর্ব বাংলার মানুষের 'দিন আনি দিন খাই' মানুষের কাছে একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্য়ু যেখানে জালিয়াতরা তাদের কোটি কোটি টাকা হাওয়া করে দিয়েছেন। বিপক্ষ দলগুলিও ভোটের বাজারে এই ইস্যুকে ঝিমোতে দেবে না। এবং তার প্রভাব তো বাংলায় সবচেয়ে বেশি পড়বেই। তবে হতে পারে ভোটের বাজারে এর প্রভাব নাও পড়তে পারে। কারণ ঠকে যাওয়া মানুষগুলি এখনও শ্যামল সেন কমিশনের উপর ভরসা রেখেছেন বলে জানিয়েছেন উদয়নবাবু।
অন্যদিকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক অজিতাভ রায়চৌধুরু জানিয়েছেন, এই ঘটনার জন্য শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলগুলিকে দোষারোপ করে কোনও লাভ নেই। হ্যাঁ তবে রাজ্যে রোজগারের পথ তৈরি না হওয়ার জন্য দলগুলিকে দায়ী করা যায় অনায়াসেই। সেই কারণেই এই ধরণের জাল পথে রোজগারই তাদের কাছে একমাত্র পথ হয়ে উঠেছিল। আইনপ্রয়োগকারি সংস্থাগুলি রাজনৈতিক চাপে সঠিক সময়ে পদক্ষেপ নিতে অসফল হয়েছে।