দু'টুকরো হবে ব্রিটেন? উত্তর পেতে গণভোটের দিকে তাকিয়ে বিশ্ব
১৮ সেপ্টেম্বর বহুচর্চিত গণভোট হবে স্কটল্যান্ডে। স্কটল্যান্ড ব্রিটেনে থাকতে চায় নাকি সব বাঁধন ছিঁড়ে স্বাধীন হবে, জবাব মিলবে ওই গণভোটে। ফলে সময় যত গড়াচ্ছে, জল্পনার পারদ চড়ছে।
স্কটল্যান্ড, ইংল্যান্ড, ওয়েলস এবং নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড-- এই চারটি ভূখণ্ড নিয়ে হল গ্রেট ব্রিটেন বা যুক্তরাজ্য। ব্রিটিশ সাংবিধানিক কাঠামোয় থেকে এরা নির্দিষ্ট ক্ষমতা ভোগ করে।
১৭০৬ সালের আগে স্কটল্যান্ড একটি স্বাধীন দেশই ছিল। কিন্তু ব্রিটিশ আধিপত্যকে আরও মজবুত করতে ১৭০৬ সালের ২২ জুলাই ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের নেতারা মতৈক্যের ভিত্তিতে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। একে বলা ট্রিটি অফ ইউনিয়ন বা সংযুক্তিকরণ চুক্তি। এর ফলে ১৭০৭ সালের পয়লা মে থেকে গ্রেট ব্রিটেনে যোগ দেয় স্কটল্যান্ড।
৩০৭ বছর গ্রেট ব্রিটেনের সঙ্গে থাকার পর স্কটল্যান্ডের অভিযোগ, নানা ইস্যুতে তারা বঞ্চিত। লন্ডনের কর্তারা এ জন্য দায়ী। তাই পূর্ণ স্বাধীনতার দাবিতে পথে নামে স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি। এই দলের নেতা অ্যালেক্স স্যালমন্ড ২০১১ সাল থেকেই স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গঠন করছেন। প্রথমে স্কটরা এ বিষয়ে পাত্তা না দিলেও ক্রমশ জনমত শক্তিশালী হয়েছে অ্যালেক্স স্যালমন্ডের পক্ষে।
স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির আন্দোলনের জেরে ঠিক হয়, চলতি বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর একটি গণভোট নেওয়া হবে। স্কটল্যান্ডের সাধারণ মানুষই ঠিক করবেন, তাঁরা ব্রিটেনে থাকবেন নাকি ভেঙে বেরিয়ে যাবেন।
এই পরিপ্রেক্ষিতে যথেষ্ট চাপে ব্রিটিশ সরকার। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, উপ-প্রধানমন্ত্রী নিক ক্লেইগ এবং বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা এড মিলিব্যান্ড এক সুরে বলেছেন, স্কটদের আরও ক্ষমতা দেওয়া হবে। রাজনীতিক, আর্থিক, আইনি ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে বাড়ানো হবে ক্ষমতা। কিন্তু তাঁরা যেন ব্রিটেন ছেড়ে না বেরোন। স্কটল্যান্ডের সাধারণ মানুষের মন জয় করতেই এই চেষ্টা বলে মনে করা হচ্ছে।
আবেগ উসকে দিয়ে ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, "ব্রিটেন একটি পরিবার। ব্রিটিশরা সেই পরিবারের সুখী সদস্য। মনে রাখবেন, ওয়াল্টার স্কটের মতো কবি, আলেকজান্ডার ফ্লেমিংয়ের মতো বিজ্ঞানী, জে কে রাওলিংয়ের মতো সাহিত্যিক, অ্যান্ডি মারের মতো খেলোয়াড় উঠে এসেছেন স্কটল্যান্ড থেকেই। স্কটল্যান্ড আমাদের গর্ব।"
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, যদি স্কটল্যান্ডকে ধরে রাখা না যায়, তা হলে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর আসন টলোমলো হবে। তাই কুর্সি বাঁচাতে মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ডেভিড ক্যামেরন।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন বলেছেন, "যখন ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের সেনারা মারা গিয়েছিল, তখন প্রশ্ন ওঠেনি তাঁরা স্কটল্যান্ড, ইংল্যান্ড, ওয়েলস নাকি নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের বাসিন্দা। একটাই পরিচয় ছিল, সেটা হল ব্রিটিশ। শহীদ ব্রিটিশ সেনারা আজও শুয়ে আছে বিশ্বের নানা প্রান্তে।"
শেষ পর্যন্ত কী হয়, সেটাই দেখতে হবে।