মমতা, আপনি অবিলম্বে সাক্ষাৎ করুন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে, সুযোগ হারাবেন না
গৌণ বিষয়কে অগ্রাধিকার
মমতা
বন্দ্যোপাধ্যায়
হলেন
এমন
একজন
মুখ্যমন্ত্রী
যিনি
তাঁর
রাজ্যের
করুণ
বাস্তবতাকে
উপেক্ষা
করছেন
এবং
সারবত্তাহীন
সস্তা
উদযাপনে
মেতেছেন।
প্রশাসন
নয়,
উনি
ভালোবাসেন
রুপোলি
পর্দার
লোকেদের
সঙ্গে
গা
ঘষাঘষি
করতে।
ক্রিকেট
স্টেডিয়ামের
বাইরে
পুলিশ
জনতাকে
পেটালে
উনি
চোখ
ফিরিয়ে
নেন
(শুধু
শুকনো
ক্ষমা
চেয়ে
কিছু
হবে
না)।
ফি
বছর
মালদার
হাসপাতালে
শিশুরা
মারা
গেলেও
ওঁর
কিছু
যায়
আসে
না।
তালিকাটা
আর
দীর্ঘায়িত
করে
লাভ
নেই।
মোদ্দা
কথা
হল,
মমতা
বন্দ্যোপাধ্যায়
রাজ্যের
একটি
করুণ
ছবি
তুলে
ধরেছেন
জনসমক্ষে।
অথচ
তিন
বছর
আগেও
অনেক
আশা
নিয়ে
মানুষ
তাঁকে
ক্ষমতায়
এনেছিল।
পূর্বসূরীরা কেন্দ্রের বিরোধিতা করত, মমতা বিরোধিতা করছেন মোদীর
যখন নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দুশমনির প্রশ্ন উঠল, তখন পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী তাঁর পূর্বসূরী অর্থাৎ একদা শক্তিশালী বামেদের পন্থাই অনুসরণ করলেন। অর্থাৎ কেন্দ্রের 'বঞ্চনা'-র অভিযোগ তুলে বাঙালি ভাবাবেগকে উসকে দিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'আবিষ্কার' হল, তিনি সরকার বা দল নয়, নিশানা বানিয়েছেন একজন ব্যক্তিকে।
বিজেপি-র
সদ্যমৃত
দুই
নেতার
অন্ত্যেষ্টিতে
অংশ
না
নিয়ে
উনি
যে
অসম্মান
জ্ঞাপন
করলেন,
তা
থেকে
বোঝা
যাচ্ছে
এটা
ঘৃণার
রাজনীতির
একটা
প্রতিচ্ছবি।
আর
সদ্যসমাপ্ত
লোকসভা
ভোটে
বিজেপি-র
ভালো
ফল
এই
ঘৃণার
রাজনীতিকে
আরও
উসকে
দিয়েছে।
আর
যেহেতু
নরেন্দ্র
মোদী
এই
নির্বাচনে
ছিলেন
বিজেপি-র
মুখ,
তাই
তিনি
মমতা
বন্দ্যোপাধ্যায়ের
নিশানা
হয়ে
উঠেছেন
স্বাভাবিকভাবেই।
রাজ্যের স্বার্থের কথা ভেবে অন্যান্য মুখ্যমন্ত্রীরা মোদীর সঙ্গে দেখা করেছেন, মমতা করেননি
কিন্তু
কেন্দ্রের
প্রতি
নিজেদের
রাজ্য
সরকারের
এই
মনোভাব
কি
পশ্চিমবঙ্গের
মানুষ
মেনে
নেবে?
জয়ললিতা
বা
নবীন
পট্টনায়কের
মতো
মুখ্যমন্ত্রীদেরও
বিজেপি-র
সঙ্গে
মতাদর্শগত
পার্থক্য
রয়েছে।
কিন্তু
জয়ের
পর
নরেন্দ্র
মোদীর
সঙ্গে
দেখা
করতে
তাঁরা
ভোলেননি।
এমনকী,
নীতীশ
কুমার
যিনি
কট্টর
মোদী-বিরোধী
বলে
পরিচিত,
তিনিও
আশা
ব্যক্ত
করেছেন
যে,
প্রধানমন্ত্রী
হিসাবে
উনি
ভালো
কাজ
করবেন।
কলঙ্কিত
ইউপিএ-র
বিদায়ের
পর
প্রত্যেক
মহলই
নতুন
করে
শুরু
করতে
চাইছে।
অথচ
মমতা
বন্দ্যোপাধ্যায়
এই
সুযোগ
নষ্ট
করছেন।
শাহরুখ খান অপেক্ষা করতে পারেন, বাংলার ভবিষ্যৎ নয়
পশ্চিমবঙ্গের
মুখ্যমন্ত্রী
নরেন্দ্র
মোদীর
সঙ্গে
সাক্ষাৎ
করার
বা
তাঁকে
অভিনন্দন
জানানোর
প্রয়োজন
বোধ
করেননি।
যদিও
তিনি
এটা
ভালো
করেই
জানেন
যে,
আগামী
কয়েক
বছর
তাঁকে
নরেন্দ্র
মোদীর
সঙ্গেই
যুঝে
চলতে
হবে।
আর
এর
সঙ্গে
তাঁর
রাজনীতিক
ভবিষ্যৎ-ও
জড়িয়ে
রয়েছে।
রাজ্যের
উন্নয়নের
বিষয়ে
তিনি
কেন্দ্রের
সঙ্গে
যত
দেরি
করে
কথা
বলবেন,
তত
সাধারণ
মানুষ
ভুগবে।
শাহরুখ
খান
অপেক্ষা
করতে
পারেন
কিন্তু
রাজ্যের
ভবিষ্যৎ
নয়।
কারণ
সব
দিক
থেকেই
পশ্চিমবঙ্গের
ভবিষ্যৎ
এখন
প্রশ্নচিহ্নের
মুখে।
দায়িত্বজ্ঞানহীনতাকে
কি
এর
চেয়ে
আর
ভালোভাবে
সংজ্ঞায়িত
করা
যায়?
বাংলার কেন্দ্র-বিরোধিতার দীর্ঘ ইতিহাস: একটি ব্যাখ্যা
পশ্চিমবঙ্গের শাসকগোষ্ঠী হল ইতিহাসের কয়েদি। কমিউনিস্টরা কেন্দ্রের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষের রাস্তা বেছে নিয়ে বাঙালি অবর-জাতীয়তাবাদ (সাব-ন্যাশনালিজম)-কে উসকেছিল। তাতে রাজ্যে তাদের মাটি শক্ত হলেও আর্থিকভাবে পশ্চিমবঙ্গ ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। কমিউনিস্টরা বাংলার প্রতিটি সমস্যার জন্য কেন্দ্রকে নিশানা বানাত। রাজ্যে শিল্প ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পিছনেও কেন্দ্রের ভূমিকাকে দুষেছিল তারা। উত্তর ভারতীয় এবং গান্ধীবাদী সংস্কৃতির প্রতি বাঙালি মধ্যবিত্তের যে চিরকালীন শত্রুভাবাপন্ন মনোভাব, তার সঙ্গে বামেদের এই অবস্থান খাপ খেয়েছিল।
গান্ধীজির সঙ্গে দ্বন্দ্বে সুভাষচন্দ্র বসু কার্যত শেষ হয়ে গিয়েছিলেন। তখন থেকেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বাঙালির একটা বিদ্বেষ জন্ম নেয়। বাম সুযোগসন্ধানীরা এই নেতিবাচক মনোভাবের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে তিন দশক ক্ষমতায় টিকেছিল।
উচ্চবর্ণভুক্ত ব্রাহ্মণ, বৈশ্য ও কায়স্থরা মধ্যবিত্ত ভদ্রলোক সমাজের অংশীদার। এই ভদ্রলোক শ্রেণীই কংগ্রেস ও বামেদের সমর্থনের ভিত্তি ছিল। ঔপনিবেশিক প্রভুদের নীতির কারণে এই কুলীন ভদ্রলোকরা জমির সঙ্গে সম্পর্ক হারিয়েছিল। পরবর্তীকালে এরা অন্য পেশায় চলে যায়। এর ফলে কুলীন শাসকরা (ভদ্রলোক) কৃষি ও শিল্প থেকে সম্পর্কহীন হয়ে পড়ে।
এই ভদ্রলোকরা একটি অনুৎপাদক শ্রেণীতে পরিণত হয়। আর্থিক উন্নয়ন ইত্যাদি বাস্তব বিষয় থেকে মুখ ফিরিয়ে কিছু বিপ্লববাদী চিন্তাকে প্রাধান্য দিতে শুরু করে। এর ফলে সমাজে টালমাটাল অবস্থা হয়। এখন যেখানে অর্থই মোক্ষ, সেখানে বিপ্লববাদী মতাদর্শের ব্যর্থতা রাজ্যকে আরও অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে।
মমতা এই ঐতিহ্যকে বহন করছেন, তবে খুবই নগ্নভাবে
কেন্দ্র-বিরোধী এই ঐতিহ্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বহন করে চলেছেন, কিন্তু খুবই নগ্নভাবে। এই অশুভ বৃত্তকে ভাঙা দরকার। যদি না হয়, তবে পরিবর্তনের কোনও অর্থই হয় না। তেমন হলে মোদী খুবই খুশি হবেন। কারণ তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একজন পরিশ্রমী রাজনীতিবিদ হিসাবে যে শ্রদ্ধা করেন, তা আগে বলেছেন।
কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটা কৃত্রিম গোঁয়ারতুমি নিয়ে চলছেন এবং তাতেই তিনি খুশি।