ঠেলার নাম বিজেপি! বামেদের সহায়তা চান মমতা, আশ্বস্ত করলেন বিমান
পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী গতকাল অর্থাৎ সোমবার বিকেলে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে নালিশ জানাতে গিয়েছিল বামফ্রন্টের প্রতিনিধি দল। সিপিএমের বিমান বসু ও রবীন দেব, সিপিআইয়ের মঞ্জুকুমার মজুমদার, আরএসপি-র ক্ষিতি গোস্বামী, ফরওয়ার্ড ব্লকের জয়ন্ত রায় প্রমুখ ছিলেন ওই প্রতিনিধি দলে। যখন তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দেখা করার সময় চেয়েছিলেন, তখন ভেবেছিলেন যথারীতি প্রত্যাখ্যাত হবেন। কিন্তু তাঁদের অবাক করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সময় দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। এর পর গতকাল যখন বিমান বসুরা নবান্নে ঢুকছেন, তখন ভেবেছিলেন হয়তো রূঢ় ব্যবহার পাবেন। কিন্তু কী আশ্চর্য! দেখলেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় নিজে ঘরের দরজার কাছে এসে অপেক্ষা করছেন! সাদরে বসালেন। এল ফিশ ফ্রাই, ক্রিমরোল, কেক আর ধোঁয়া ওঠা দার্জিলিং চা।
প্রথমেই বিমান বসু বলেন, রাজ্যে শাসক দলের কর্মীরা সন্ত্রাস চালাচ্ছে। মূলত বামফ্রন্টের লোকজন এর শিকার। এঁরা ঘরে ফিরতে পারছেন না, ক্ষেতের ফসল ঘরে তুলতে পারছেন না। পুলিশ উল্টে বামফ্রন্ট কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করছে। এই পরিবেশ ঘুচিয়ে শান্তি ফেরাতে হবে। বিমানবাবুরা ভেবেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী সটান এ সব উড়িয়ে দেবেন। কিন্তু আবারও বিস্ময়! স্মিত হেসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জবাব দেন, "আমি কেস টু কেস দেখব। তদন্ত হবে।"
বিমান বসু পাল্টা বলেন, "সন্ত্রাস অবিলম্বে বন্ধ না হলে আমরা রাস্তায় নামব। আন্দোলন করব।" অন্য সময় হলে হয়তো তাঁকে খেঁকিয়ে ঘর থেকে বিদেয় করে দিতেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু কী আশ্চর্য, একগাল হেসে তিনি বলেন, "নিশ্চয় করবেন। আন্দোলন করাই তো রাজনীতিক দলের কাজ। এটাই গণতন্ত্র।"
জ্যোতি বসুর নামে গবেষণাকেন্দ্র গড়তে সিপিএমকে জমি দেবে রাজ্য সরকার
এর পরই তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো তথা মুখ্যমন্ত্রী সোজা ঢুকে পড়েন বিজেপি প্রসঙ্গে। বিমানবাবুকে প্রশ্ন করেন, "সিপিএম ছেড়ে এত লোক বিজেপি-তে যাচ্ছে কেন? কেন এই ছন্নছাড়া দশা? আপনারা নিজেদের ঘর সামলান।" গদগদ বিমানবাবু তখন বলেন, "সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আমাদের আপসহীন অবস্থান বহুদিনের। বিজেপি ধর্মনিরপেক্ষ পশ্চিমবঙ্গের পক্ষে একটা বিপদ। আমরা সাম্প্রদায়িক শক্তি বিজেপি-কে রুখতে সরকারকে সব রকম সহযোগিতা করব।" এই মন্তব্যে সহমত পোষণ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "আপনারা নিশ্চয় দেখেছেন, এখানে আরএসএস কী বাড়াবাড়ি শুরু করেছে! কিছুদিন আগেই বারুইপুরে বড় সভা করে উসকানি দিয়েছে। আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। পশ্চিমবঙ্গে গোলমাল পাকানোর চেষ্টা হলে আমি কড়া হাতে দমন করব। নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হলেও আমার ঘেঁচু করবে। আইনশৃঙ্খলা তো রাজ্যের বিষয়। কোনও চক্রান্তের খবর পেলে পার্থদাকে (পার্থ চট্টোপাধ্যায়) জানাবেন। দরকারে আমাকেও সরাসরি ফোন করতে পারেন।" তিনি নিজের মোবাইল নম্বর এর পর বামফ্রন্ট নেতাদের দিয়ে দেন।
মুখ্যমন্ত্রীর মেজাজ শরিফ আছে বুঝতে পেরে আলোচনার শেষে রবীন দেব বলেন, রাজারহাটে জ্যোতি বসুর নামে একটি গবেষণাকেন্দ্র খোলার ইচ্ছে আছে। অথচ জমি মিলছে না। তক্ষুণি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আশ্বাস দেন, তিনি নিজে বিষয়টি দেখবেন। জ্যোতি বসুর নামে গবেষণাকেন্দ্র হবে, এ জন্য জমি পেতে সমস্যা হবে না।
দু'ঘণ্টার বৈঠক শেষে বিমান বসু সাংবাদিকদের বলেন, "আমাদের সব কথা উনি ধৈর্য ধরে শুনেছেন। আমরা কয়েকদিন অপেক্ষা করব। দেখি কী হয়! না আঁচালে বিশ্বাস নেই।"
তৃণমূল কংগ্রেস আর বামফ্রন্টের এই হৃদ্যতা নিয়ে খোঁচা দিতে ছাড়েননি বিজেপি-র রাজ্য সম্পাদক শমীক ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, "আমি তো আগেই বলেছিলাম, একটা সেটিং হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বুঝেছেন, যেখানে চটখোলা ভোট (জবরদস্তি) হয়নি, সেখানেই লোকে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। বিপদ বুঝতে পেরে তাই এখন সিপিএমকে ডাকছেন। কী দিনকাল!"
যখন নবান্ন থেকে বিমানবাবুরা বেরিয়ে আসছেন, তখন দেখা গেল শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় নিজে এগিয়ে এসে একগাল হেসে বিদায় জানাচ্ছেন।