সংঘর্ষে জখম পুলিশকর্মী মারা গেলেন, তোপের মুখে অনুব্রত
লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূল কংগ্রেসের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বিভিন্ন জনসভায় বিরোধীদের পিটিয়ে মারার হুমকি দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, পুলিশ বাধা দিতে এলে ওদের বোমা মারুন। অভিযোগ, এর পরই বীরভূমের বিভিন্ন জায়গায় উত্তেজনা ছড়ায়। ১৬ মে ভোটের ফল বেরোয়। ৩ জুন দুবরাজপুর থানার অন্তর্গত আউলিয়া গ্রামে তৃণমূল কংগ্রেসের লোকজন সিপিএমকে আক্রমণ করে বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে পুলিশ আসে। অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইন্সপেক্টর অমিত চক্রবর্তী সংঘর্ষ থামাতে গেলে শাসক দলের গুন্ডারা তাঁকে লক্ষ্য করে বোমা ছোড়ে বলে অভিযোগ। বোমাটি কোমরে গিয়ে লাগে। অমিতবাবুর কোমর থেকে মাংস খসে পড়ে। পেট থেকে বেরিয়ে যায় নাড়িভুঁড়ি। গুরুতর অবস্থায় তাঁকে দুর্গাপুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই থেকে তিনি কোমায় ছিলেন। সোমবার সকালে তিনি মারা যান।
"এতদিন জানতাম, সাধারণ মানুষ নিরাপদ নেই। এখন দেখছি, পুলিশও নিরাপদে নেই"
এই ঘটনার পরই উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজ্য রাজনীতি। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরী বলেন, "এতদিন জানতাম, সাধারণ মানুষ এ রাজ্যে নিরাপদ নেই। এখন দেখছি, পুলিশও নিরাপদে নেই। এ কোথায় বাস করছি আমরা? বিপদে কে নিরাপত্তা দেবে? বামফ্রন্ট জমানায় খিদিরপুরে পুলিশ অফিসার বিনোদ মেহতাকে খুন করা হয়েছিল। কসবাতেও পুলিশকে মারা হয়েছিল। রাজ্যে ক্ষমতার পরিবর্তন হলেও ট্র্যাডিশন ধরে রেখেছে তৃণমূল কংগ্রেস।"
বিজেপি রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহা বলেছেন, "পশ্চিমবঙ্গে আইনের শাসন নেই। দেখুন, এর পরও রাজ্য সরকার চোখ বুজে রয়েছে।" সিপিএমের মতে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নরম মনোভাবে প্রশ্রয় পাচ্ছে দুষ্কৃতীরা।
প্রাক্তন আইপিএস অফিসার সন্ধি মুখোপাধ্যায় বলেছেন, "এটা দুভার্গ্যজনক। রাজনীতিক দলগুলো নিজেদের স্বার্থে পুলিশকে কাজে লাগায়। অথচ পুলিশকর্মীদের কথা ভাবে না। শাসক দলের কোনও নেতা যদি পুলিশকর্মীদের প্রাণে মারার কথা বলেন, তা হলে দুষ্কৃতীরা উৎসাহ পাবে, এটাই স্বাভাবিক। যারা ক্ষমতায় থাকে, তাদের সংবিধান, আইনের কাছে দায়বদ্ধ থাকা উচিত। হিংসায় প্ররোচনা দেওয়া তাদের কাজ নয়।"
প্রসঙ্গত, অনুব্রত মণ্ডলের প্ররোচনার পর পাড়ুই গ্রামে খুন হয়েছিলেন রাজনীতিক কর্মী সাগর ঘোষ। তার পরও তাঁকে পুলিশ ক্লিনচিট দিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেছেন, কেষ্ট (অনুব্রত মণ্ডল) নির্দোষ। ভালো সংগঠক বলে বিরোধীরা ওর পেছনে লাগছে!