'ত্রিপলের ঝুপড়িতেও দিন কাটাতে হয়েছে', জীবনযুদ্ধের কাহিনি তুলে ধরলেন অভিনেত্রী সুস্মিতা
আর কয়েকদিনের অপেক্ষা , তারপরই মাতৃ আরাধনায় মেতে উঠতে চলেছে বাঙালি। মাতৃশক্তিকে উদযাপনের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে নারীর প্রতি শ্রদ্ধা-সম্মানের প্রতিশ্রুতি।
আর কয়েকদিনের অপেক্ষা , তারপরই মাতৃ আরাধনায় মেতে উঠতে চলেছে বাঙালি। মাতৃশক্তিকে উদযাপনের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে নারীর প্রতি শ্রদ্ধা-সম্মানের প্রতিশ্রুতি। আর এই ভাবনাকে আরও উস্কে দেয় দেবীপক্ষের আবহ.. উস্কে দেয় দুর্গাপুজো। এমন এক ভাবনাকে কুর্নিশ জানিয়ে 'ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলা' তুলে ধরছে কিছু অসামান্য জীবন যুদ্ধের কাহিনি। এমনই এক লড়াইয়ের কাহিনি তুলে ধরলেন অভিনেত্রী সুস্মিতা রায় চক্রবর্তী।
'কৃষ্ণকলি' ধারাবাহিকে 'মুখরা বৌদি' পার্বতীর ভূমিকায় আপনারা দেখেছেন সুস্মিতাকে। তাঁকে দেখেছেন 'স্বপ্ন উড়ান', 'দুই পৃথিবী' ধারাবাহিকে । 'ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলা'-র 'জয়ং দেহি রূপং দেহি' বিভাগে এবার দেখে নিন কতটা লড়াইয়ের পথ পেরিয়ে ক্রমাগত জীবনযুদ্ধ জয় করে চলেছেন 'কৃষ্ণকলি'-র 'পার্বতী' সুস্মিতা।
শুরু গল্পটা আগে শুনব.. কোথা থেকে শুরু হল পথ চলা ?
আমি কনজারভেটিভ ফ্যামিলির মেয়ে ছিলাম। বুঝতেই পারছেন, সেখান থেকে অভিনেত্রী হওয়ার লড়াইটা কতটা কঠিন ছিল। থার্ড ইয়ারে পড়ার সময় একটা অডিশনে সিলেক্ট হই। তখন বাড়ি থেকে স্পষ্ট বলে দেওয়া হয় , অভিনেত্রী হওয়ার অনুমতি দেওয়া যাবে না। ফলে বাড়ির কারোরই মত ছিল না আমার অভিনয় জগতে আসবার পক্ষে। বলা হয় , 'যদি ইন্ডাস্ট্রিতে যেতে চাও তাহলে আমাদের ভুলে যাও', তখন শুরু হয় লড়াইটা।
কতটা কঠিন ছিল এই লড়াই ?
আমি ভেবে দেখলাম, আমি যদি ফিরে যাই , তাহলে অভিনেত্রী হওয়া হবে না। এরপর জেদ চাপে লক্ষ্য পূরণের। এদিকে, বাড়ি থেকে টাকা পাঠানো বন্ধ হয়ে যায়। কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজতে থাকি। আর পাশাপাশি চলে অভিনয়ের জন্য অডিশন।
আপনার ছোটবেলা কোথায় কেটেছে ?
আমার ছোটবেলা কেটেছে সুন্দরবনে। বাবা মা ওখানেই পোস্টেড ছিলেন । সেখান থেকেই আমার স্কুলিং , বড় হওয়া... কলেজে পড়ার সময় কলকাতায় আসি।
পেশাগত আর ব্যক্তিগত জীবনে এই 'খোঁজ' শেষ হয় কীভাবে?
সেই সময় আমার লড়াইটা ছিল খাবার আর বাসস্থানের জন্য আর কাজের জন্য। একটা সময়, শিয়ালদহ স্টেশনে ত্রিপলের নিচে জায়গা খুঁজেনি। ওই ত্রিপলের নিচে বেঁচে থাকা মানুষগুলোর সঙ্গে থেকেছি টানা ১৫ দিন । সারাদিন অডিশনের জন্য ঘুরেছি, আর রাতে এসে ওঁদের সঙ্গে খেয়েছি। আমি জানি ওই ত্রিপলের নিচে মালশাতে যে ফ্যান ভাত রান্না হয়, তার স্বাদ কী! এরপর প্রথম সুযোগ পাই 'যখন একুশে পা' -এ ।
এরপরের লড়াইটা কেমন ছিল?
এরপর হাতে রোজগার আসতে থাকে। একটা বাড়িতে ভাড়ায় থাকতে শুরু করি। সারাদিন শ্যুটিং এর খাবার আর রাতে মোমো খেয়ে ঘুমিয়ে পড়তাম। এভাবে এগোতে লাগল সফর।
এরপর বাড়ি ফিরে ছিলেন?
এরপর বাড়ির সবাই ধীরে ধীরে মেনে নিলেন। সমস্ত কিছুই ঠিকঠাক হতে লাগল। তবে লড়াইটা অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়ে গিয়েছে।
ব্যক্তিগত জীবনের এই রূপকথার মতো একইরকম কি ছিল পেশাগত জীবনের লডা়ইটাও?
না ওটাও সহজ নয়। শুরু দিকে অনেক ভয়ঙ্কর ঘটনার মুখে পড়েছি। একে কলকাতা চিনতাম না, তার ওপর সব নতুন! বহু ভুয়ো লোকের পাল্লাতেও পড়েছি। অডিশনের নাম করে অশালীন আচরণ দেখেছি মানুষের। কিন্তু অদ্ভুত একটা শক্তি পেয়ে গিয়েছিলাম সেই সময়ে, যে অত ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিও দাপটের সঙ্গে কাটিয়ে উঠেছিলাম। পরে বুঝেছি এই সমস্ত লোকজন আসলে ইন্ডাস্ট্রির 'আগাছা'।
এখনের লড়াইটা কোন পর্যায়ে?
এখন তো নিত্য়দিন শিখছি। ক্যামেরা ফেসিং থেকে শুরু করে অভিনয়ের খুঁটিনাটি রোজ শিখছি। এখন অনেকটা সড়গড় হয়ে গিয়েছি সব কিছুর সঙ্গে।
প্রতিযোগিতার চাপ কীভাবে সামলান ?
আগে এসব কিছু বুঝতাম না। পেশার ক্ষেত্রে বলতে পারি, সকলের সঙ্গে সদ্ভাব রেখে চলার চেষ্টা করি।
ব্যক্তিগত বা পেশাগত জীবনে কাউকে দেখে সেভাবে প্রেরণা পেয়েছেন?
না , সেভাবে কেউ নেই। এই লড়াইটা আমার একারই ছিল, একা একাই লড়াইয়ের ইঁট গেঁথে গিয়েছি। চিরকালই ভেবেছি ভালো অভিনেত্রী হব, আর চেয়েছিলাম সবাই আমায় 'সুস্মিতা রায়' বলেই মনে রাখুক।
কেন অভিনয়কেই বেছে নিলেন, ..কেন অন্য কিছু নয়?
ছোটবেলায় স্কুলে 'অমল ও দইওয়ালা ' রিডিং পড়ায় সময় থেকেই সংলাপগুলো অভিনয় করে পড়তে ভালো লাগত। সেই থেকে শুরু তারপর স্কুলের নাটক, আর এভাবেই ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় স্বপ্নের সফর।
প্রিয় অভিনেতা হিসাবে কেউ রয়েছেন?
সেদিক থেকে দেখতে গেলে, পিটার ডিঙ্কলেজ, উত্তম কুমার, চার্লি চ্যাপলিন তো আছেনই। তালিকা বড্ড লম্বা জানেন তো.. (হেসে)!
এযুগে যাঁরা আপনার মতোই স্বপ্ন দেখছেন, বা আপনার মতো করে এগোতে চাইছেন, তাঁদের কী বার্তা দেবেন?
তাঁদের নয় ,এই উঠতি প্রতিভাবানদের অভিভাবকদের বলব , তাঁর যেন সন্তানকে সবরকমভাবে সাপোর্ট করেন। আর যাঁরা অভিনয়ের জগতে নতুন, তাঁদের অবশ্যই বলব অভিনয়েই মনোনিবেশ করাটা বেশি জরুরি।