'মিশন মঙ্গল': জাতীয়তাবাদী সুড়সুড়ি এবার ছুঁল মহাকাশও; কিন্তু মনে জাগে অন্য প্রশ্নও
এই স্বাধীনতা দিবসে মুক্তি পাচ্ছে ফের একটি জাতীয়তাবাদী সুড়িসুড়ি-মূলক ছবি 'মিশন মঙ্গল'। অক্ষয়কুমার, বিদ্যা বালান, তাপসী পান্নু, সোনাক্ষী সিনহা প্রমুখ অভিনীত এই ছবিটি বানানো হয়েছে কয়েক বছর আগে ভারতের
এই স্বাধীনতা দিবসে মুক্তি পাচ্ছে ফের একটি জাতীয়তাবাদী সুড়িসুড়ি-মূলক ছবি 'মিশন মঙ্গল'। অক্ষয়কুমার, বিদ্যা বালান, তাপসী পান্নু, সোনাক্ষী সিনহা প্রমুখ অভিনীত এই ছবিটি বানানো হয়েছে কয়েক বছর আগে ভারতের মঙ্গলগ্রহে পাঠানো যান 'মঙ্গলযান'-এর উপরে। পৃথিবীর প্রথম দেশ হিসেবে প্রথম চেষ্টাতেই মঙ্গল গ্রহে সফলভাবে মহাকাশযান পাঠানো বা মাত্র সাড়ে চারশো কোটিতেই পুরো মিশন নামিয়ে ফেলা, এমন নানাবিধ চিত্তাকর্ষক কাহিনী জড়িয়ে রয়েছে ভারতের মিশন মার্সকে ঘিরে।
১৫ই অগাস্টেই কেন বেচতে হবে এই চিরকালের জাতীয় গর্বকে?
সেসব গর্বের অধ্যায় তো রইলই। কিন্তু যে প্রশ্নটা ঘুরপাক খায় মাথায় প্রায়ই: তা হল ১৫ আগস্টে কেন এমন ছবি বানাতে হবে? ঠিক যেমন ২০১৬ সালের ২৬ জানুয়ারি অক্ষয়কুমারেরই 'এয়ারলিফট' নামে একটি ছবি মুক্তি পেয়েছিল এবং সেটিও ছিল জাতীয়তাবাদ-ধর্মী। বলতে গেলে ৫১ বছর বয়সী অক্ষয়কুমার আজকাল জাতীয়তাবাদী ছবি আকছারই করেন -- যেমন 'রুস্তম', 'গোল্ড' বা 'কেশরী'।
কথা হচ্ছে, মঙ্গল জয়ের ছবি করতে গেলে কেন ১৫ আগস্ট নামক জাতীয়তাবাদ জাহির করার দিনটিকেই বেছে নিতে হবে? 'মিশন মঙ্গল'-এর কুশীলবরা একটি প্রেস কনফারেন্সে কথা বলছিলেন এবং সেখানে তাঁদের বক্তব্য শুনে মনে হল তাঁরা খুব সম্প্রতিই মঙ্গলযানের সম্বন্ধে শুনেছেন। এবং শুনে নাকি তাঁরা এতটাই চমৎকৃত হয়েছেন যে তাঁদের এই ছবি নিয়ে গর্ব আরও বেড়েছে।
খটকা লাগে এই ধরনের কথাবার্তা শুনেই। যদি সত্যিই ভারতীয় হিসেবে মঙ্গলযানের কাহিনী নিয়ে গর্বিত হন তাঁরা, তবে আমাদের শিল্পীদের ঘটনাটা নিয়ে সচেতনতার এত অভাব কেন? কেন পরিচালকদের কাছে থেকে শুনেই তাঁরা প্রথম রোমাঞ্চ বোধ করেন? আর কেনই বা ১৫ আগস্টে এই মহা মুহূর্তটিকে স্মরণ করতে হয় আমাদের?
জাতীয়তাবাদ এখন গরম চানাচুরের মতো বিক্রি হয়
আসলে জাতীয়াতাবাদী সুড়সুড়িতে ব্যবসা চলে রমরমিয়ে। সে রাস্তার পাশে গরিব তেরঙ্গা বিক্রেতা হোক বা অক্ষয়কুমারের চলচ্চিত্র, ওই বিশেষ দিনগুলিতে 'মেরে দেশ মহান' বলে ঝাঁপ দিলে মা রক্ষা করবেনই। আর বর্তমানে দেশের যা আবহ, তাতে যে এই নৈবেদ্য জনতা আরও রসিয়ে গ্রহণ করবেন, তা নিয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। দেশে এখন 'দেশপ্রেমের' ব্যবসা চলছে প্রবল ঢক্কানিনাদ সহ আর তার আগুনেই হাত সাত তাড়াতাড়ি সেঁকে নিচ্ছে কতিপয় দেশপ্রেমী ব্যবসায়ী।
দেশপ্রেম তো হল, কিন্তু লিঙ্গ সাম্য?
কিন্তু দেশপ্রেম কি লিঙ্গ সাম্যের চেয়েও বড়? 'খিলাড়ির' রক্ত-গরম করা ছবিগুলি দেখলে ওঠে এই প্রশ্নও। 'মিশন মঙ্গল'-এর যাবতীয় নেতৃত্ব, লম্ফোঝম্ফ, সংলাপ তো অক্ষয়ই দিলেন বা বললেন। অন্যদিকে, পাঁচ পাঁচজন মহিলা তাঁর দলের সদস্য হিসেবে অভিনয় করলেও তাঁদের তো পার্শ্বচরিত্রেই থেকে যেতে দেখা গেল, অন্তত ট্রেলারে। অক্ষয়ের অন্যান্য জাতীয়তাবাদী সুড়সুড়ির ছবিগুলিতেও তাই দেখা গিয়েছে -- ধ্বজা ধরে থাকেন তিনিই স্বয়ং। তাহলে কি ধরে নিতে হবে যে জাতীয়তাবাদ এবং লিঙ্গসাম্য সহাবস্থানে রাজি নয়?
কী বলেন দর্শককুল?