ভূত চতুর্দশী মুভি রিভিউ : মৈনাকের কলমে গল্পের বুনন টানটান
হরর, লাভ, সেক্স ও কনক্লুসন।লাল মাটির শান্তিনিকেতনের প্রেক্ষাপটে নির্মিত সিনেমা ভূত চতুর্দশীর মূল ইউএসপিই যদি হয় গল্পের বুনন, সেখানে কিছুটা কৃতিত্ব দিতেই হবে ডিরেক্টরিয়াল ভিউকে।
হরর, লাভ, সেক্স ও কনক্লুসন।
লাল মাটির শান্তিনিকেতনের প্রেক্ষাপটে নির্মিত সিনেমা ভূত চতুর্দশীর মূল ইউএসপিই যদি হয় গল্পের বুনন, সেখানে কিছুটা কৃতিত্ব দিতেই হবে ডিরেক্টরিয়াল ভিউকে। যা অতীতে টলিউডে নির্মিত অন্যান্য হরর সিনেমার থেকে এই সিনেমাকে নিঃসন্দেহে আলাদা করেছে।
স্বতন্ত্র ধর্মী মৈনাক ভৌমিক যেমন তাঁর কলমের খোঁচায় এ সমাজে যুগ যুগ ধরে চলে আসা কিছু সনাতন বিশ্বাসে সুকৌশলে আঘাত করেছেন। তেমনই তুলে ধরেছেন জেন এক্সের কিছু বাস্তবধর্মী চিন্তাধারাও। দুইয়ের মিশেল নির্ভর গল্পকে সেলুলয়েডে ফুটিয়ে তরুণ পরিচালক সাব্বির মল্লিক তাঁর দক্ষতার পরিচয় রেখেছেন। সিনেমায় তরুণ অভিনেতা আরিয়ান ভৌমিক, এনা সাহা, দীপশ্বেতা মিত্র, সৌমেন্দ্র ভট্টাচার্যকেও বেশ ফ্রেশ দেখিয়েছে।
সিনেমার প্রেক্ষাপট
ভূত চতুর্দশীর অধিকাংশ স্যুট বোলপুর থেকে কিছুটা দূরে রাঙা মাটির পথ ধরে কোনো এক পরিত্যক্ত পুরনো বাড়িতে হয়েছে। ঝোপ-জঙ্গলে ঘেরা সেই জায়গায় গা ছমছম করবে যে কারোর। গ্রাম্য-নিঝুম পরিবেশে সিনেমার অবিরাম চলন তাতে অন্য একটা ফ্যাক্টর ইনজেক্ট করেছে বলাই বাহুল্য।
গল্প
শোনা যায়, মৈনাক ভৌমিক নিজে নাকি হরর মুভির ফ্যান। গল্পের প্রতি ছত্রে তার প্রমাণও পাওয়া যায়। এবং পাওয়া যায় কিছু পপুলার চিন্তাধারাও। শহর কলকাতার তরুণ রানো (আরিয়ান) সিনেমা বানাতে চায়। সেই চিন্তাভাবনা থেকেই গার্লফ্রেন্ড শ্রেয়া (এনা সাহা), বন্ধু পৃথা (দীপশ্বেতা মিত্র) ও দেবুকে (সৌমেন্দ্র ভট্টাচার্য) নিয়ে রোড ট্রিপে বেরিয়ে পৌঁছয় বোলপুরের অদূরে এক সাঁওতালি গ্রামে। ভূত চতুর্দশীর দিন তথ্যচিত্র স্যুট করতে তারা এক পরিত্যক্ত পোড়ো বাড়িতে যায়। সেখানেই ওই চার জনের সঙ্গে একের পর এক অলৌকিক ও ভূতুড়ে ঘটনা ঘটতে থাকে। তারই মধ্যে প্রেম, ভালোবাসা ও যৌনতার হাতছানিও দক্ষভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক।
উত্তরণ
ভাঙাচোড়া ওই পুরনো বাড়ির চারপাশ ঝোপ-জঙ্গলে ভরা। গ্রামের মানুষেরাও কেমন অদ্ভুত। বাড়ির অদূরে গাছে বাঁধা পুতুল, তার নিচে পড়ে থাকা পাথরে লেখা এক নাম, লক্ষ্মী। সিনেমার গল্পও আবর্তিত হয় ওই নামকে ঘিরেই।
লক্ষ্মী এক বাচ্চা মেয়ে। ডাইনি সন্দেহে যাকে দীর্ঘদিন ওই পোড়ো বাড়িতে আটকে রেখেছিলেন গ্রামের মোড়লরা। সমাজের অত্যাচারে একদিন পঞ্চভূতে বিলীন হয় লক্ষ্মীর শরীর। কিন্তু তার অতৃপ্ত আত্মা নাকি ওই বাড়িরই ঘুরে বেড়ায়। সন্ধ্যে হতেই শুরু হয় অশরীরি লক্ষ্মীর উৎপাত। শোনা যায় শিশুর কান্না ও হাসি। তাই ওই এলাকায় ভুলেও যান না স্থানীয়রা। আর সেখানেই গিয়ে পড়া রানো, শ্রেয়া, পৃথা ও দেবুর সম্মুখীন হয় বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতের। এক কাল্পনিক মায়ার জগতে আটকে যায় তারা।
অভিনয়
তরুণ আরিয়ান ভৌমিক, এনা সাহা, দীপশ্বেতা মিত্র, সৌমেন্দ্র ভট্টাচার্য আপ টু দ্য মার্ক বললে ভুল হবে না। পরিচালক ঠিক যতটা চেয়েছেন ক্যামেরার সামনে ততটাই দিয়েছেন তাঁরা।
পরিশেষে
যতটা আশা করা হয়েছিল ভূত চতুর্দশী ঠিক ততটাই ভালো কিনা, তা জানতে গেলে ঢু মারতেই হবে আশেপাশের থিয়েটারে।