মোদী-ইমরান শান্তির কথা বলছেন ঠিকই, কিন্তু ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখে যে ডরায়!
মোদীও ইমরানের অভিনন্দন বার্তার জবাবে বলেন যে তিনিও এই অঞ্চলের শান্তি এবং উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন।
নরেন্দ্র মোদী ফের ক্ষমতায় ফিরলেন বিপুল জনাদেশে নিয়ে। ২০১৪ সালের পারফরম্যান্সকে ছাপিয়ে বিজেপি একাই এবারে ৩০০ আসন দখল করেছে সংসদে যার অর্থ ইন্দিরা গান্ধীর পরে মোদীই সেই প্রধানমন্ত্রী যিনি পরপর দু'টি মেয়াদে একক ক্ষমতায় মসনদে এলেন। মোদীর এই বিপুল জয়ের পরে সব দেশ থেকে আসে অভিনন্দন এবং প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও তড়িঘড়ি বার্তা পাঠিয়ে বলেন ভারতের এই নতুন সরকারের সঙ্গে তিনি কাজ করতে আগ্রহী দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তিস্থাপনে।
মোদীও ইমরানের অভিনন্দন বার্তার জবাবে বলেন যে তিনিও এই অঞ্চলের শান্তি এবং উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন।
সাময়িক উত্তেজনার পরে ফের দুই প্রতিবেশীর মুখে শান্তির কথা
কে বলবে এই কয়েকদিন আগে এই দুই দেশের মধ্যে তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি হয় পুলওয়ামায় ভারতের আধা-সেনার উপরে জঙ্গি হানার উপরে এবং আকাশপথে যুদ্ধবিমানের এক প্রস্থ লড়াইও হয়। সেই লড়াইতে ভারতের একটি প্লেন পাকিস্তানের মাটিতে ভেঙে পড়লে তার চালক বর্তমান অভিনন্দনকে পাকিস্তান আটক করে এবং পরে ইমরানের উদ্যোগে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়; উত্তেজনা প্রশমিত হয় দুই পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশী দেশের মধ্যে।
আগেরবারও নওয়াজ শরিফের সঙ্গে কম দহরম করেননি মোদী
ঘটনা হচ্ছে, আগেরবার যখন মোদী প্রধানমন্ত্রী হন, পাকিস্তানে তখন রাজত্ব চলছে নওয়াজ শরিফের। তিনি ঠিক তার আগের বছরেই ক্ষমতায় আসেন এবং অতীতে ভারতের সঙ্গে শান্তি প্রক্রিয়ায় উদ্যোগী হওয়া নওয়াজের থেকে সেবারেও ভারতের আশা ছিল তিনি শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করবেন। মোদী তাঁর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে নওয়াজ সহ দক্ষিণ এশিয়ার সার্ক গোষ্ঠীর বিভিন্ন রাষ্ট্রনায়ক অথবা তাঁদের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানান। লক্ষ্য ছিল এক বড় শান্তিকামী কূটনৈতিক পদক্ষেপ।
তবে শরিফের সঙ্গে নয়াদিল্লিতে করমর্দন করলেও তাঁর পূর্বসূরি অটলবিহারী বাজপেয়ির মতো মোদীরও অভিজ্ঞতা সুখকর হয়নি। ২০১৪ সালের নভেম্বরে নেপালে আয়োজিত সার্ক বৈঠকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে শুরু হয় কূটনৈতিক তরজা এবং তার পরের বছর ডিসেম্বরে মোদীর আচমকা লাহোরে শরিফের সঙ্গে দেখা করার পরেই ঘটে পাঠানকোটের মতো জঙ্গি হামলা। উরি হামলা হয় ২০১৬-র সেপ্টেম্বরে এবং মোদীর পাকিস্তান নীতি নিমেষে প্রশ্নের মুখে এসে দাঁড়ায়। সেই থেকে তাঁর প্রথম মেয়াদের শেষ দিন পর্যন্ত পাকিস্তানের সঙ্গে আর সম্পর্কে জোড়া লাগেনি মোদী সরকারের।
মোদী এবারে পাকিস্তান নিয়ে কড়া অবস্থান নিয়েছেন ভোটের আগে
এবারেও কি সেরকম কিছু হতে চলেছে? আগেরবারের নির্বাচনের আগে পাকিস্তানের সম্পর্কে মোদীকে কট্টরবাদী ভাষণ দিতে শোনা যায়নি; বরং বন্ধুত্বের কথাই বার বার বলেছেন তিনি। কিন্তু এবারে পাকিস্তান ও বালাকোট নিয়ে উত্তেজনার মধ্যেই নির্বাচনের দামামা বেজেছে এবং মোদীকে ইসলামাবাদ সম্পর্কে কড়া হতে দেখা গিয়েছে। যদি আগেরবারের বন্ধুত্বপূর্ণ বাতাবরণেই শান্তির কথা এগোয়নি বিশেষ, তাহলে এবারে কি নিশ্চয়তা যে ইমরান খান সরকারের সঙ্গে মোদীর দ্বিতীয় মেয়াদের সরকারের সম্পর্ক ভালোভাবে এগোবে?
আসলে সম্পর্ক ভালোভাবে এগোবে কি না তা নির্ভর করছে কয়েকটি বিষয়ের উপরে।
চিন ফ্যাক্টর
প্রথম বিষয় হচ্ছে চিন। সম্প্রতি বেইজিং পাকিস্তান-স্থিত জঙ্গি মাসুদ আজহারকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিষিদ্ধ করার পথ থেকে নিজের আপত্তি তুলে নেওয়ার পরে ইসলামাবাদ একটি সাবধানবাণী পেয়েছে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে। অন্যান্য পশ্চিমি শক্তিগুলিও পুলওয়ামাকাণ্ডের পরে পাকিস্তানের উপরে কড়া নজর রেখেছে। এখন ইমরান সরকার যদি ঘরের মাটিতে জঙ্গিদমনে ব্যর্থ হয়, তাহলে তা আন্তর্জাতিক দরবারে পাকিস্তানকে ফের সমস্যায় ফেলবে। তাই নিজেদের স্বার্থেই পাকিস্তানের এখন ভারতের সঙ্গে একটিই নীতি অর্থাৎ শান্তির নীতি অবলম্বন করা জরুরি।
আফগানিস্তান, ইরান ফ্যাক্টর
দ্বিতীয়ত, আফগানিস্তান। আফগানিস্তানে শান্তি প্রক্রিয়ার জন্যে তালিবানের সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধিদের কথা চলছে এবং এই মিশন সফল করতে হলে পাকিস্তানের সহযোগিতাও প্রয়োজন কারণ তালিবানরা যদি পাকিস্তানের সাহায্যে নিজেদের নাশকতাপূর্ণ কাজকর্ম চালিয়ে যায়, তাহলে ফের ইসলামাবাদের দিকেই আন্তর্জাতিক শক্তিগুলির নজর পড়বে; অস্বস্তিতে পড়বেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান। পাশাপাশি রয়েছে ইরানও।
কয়েকদিন আগেই সেদেশে গিয়ে ইমরান স্বীকার করেন যে পাকিস্তানের মাটি থেকে সীমা পেরিয়ে সন্ত্রাস চালানো হয়েছে ইরানে। তাতে তিনি নিজের দেশে বিরোধীদের চক্ষুশূল হলেও তাঁর মন্তব্যে যে সারবত্তা ছিল না তা নয়। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ-এর নেতা ইমরান হয়তো সত্যিই চেষ্টা করছেন আঞ্চলিক শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে কিন্তু মোদী এবং সুষমা স্বরাজ-পরবর্তী বিদেশমন্ত্রী তাঁকে কতটা বিশ্বাস করতে পারবেন, এখন সেটাই দেখার।