For Quick Alerts
ALLOW NOTIFICATIONS  
For Daily Alerts
Oneindia App Download

বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ: প্রচলিত ধারণা ভেঙে বাস্তবের অনুসন্ধান

  • By Pathikrit
  • |
Google Oneindia Bengali News

বাংলাদেশ
বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী ইস্যু কিংবা কোকরাঝাড়ে সাম্প্রতিক গণহত্যা নিয়ে এখন চর্চা চলছে। এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার আগে দেখে নেওয়া যাক, দুনিয়ার অন্যান্য প্রান্তে স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে অনুপ্রবেশকারীদের কী ধরনের সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে!

মায়ানমার থেকে আসা অনুপ্রবেশকারীদের সঙ্গে নির্মম ব্যবহার করে বাংলাদেশ

বেশি দূরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। পড়শি বাংলাদেশের কথাই ধরুন। মায়ানমার থেকে উচ্ছেদ হওয়া হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলিমদের অনুপ্রবেশ নিয়ে কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে বাংলাদেশ।

মায়ানমার থেকে নৌকো বোঝাই করে বাংলাদেশে আসে রোহিঙ্গা মুসলিমরা। অবস্থা এমনই যে, বাংলাদেশের পার্লামেন্ট সম্প্রতি একটি প্রস্তাব পাশ করার ব্যাপারে আলোচনা করেছে। তা হল, বাংলাদেশে বসবাস করা রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের জন্ম নিয়ন্ত্রণে বাধ্য করা। কারণ নবজাতকরা মাথাপিছু প্রতি মাসে ১২ কিলো করে চাল পায়। তাই রোহিঙ্গাদের উদ্দেশ্য হল আরও বেশি সন্তান উৎপাদন করা।

এখানেই থেমে থাকেনি বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ। তারা বিভিন্ন সহায়তা দানকারী সংগঠনগুলিকে বলেছে, রোহিঙ্গাদের ত্রাণ সামগ্রী দেওয়া বন্ধ করতে হবে। কারণ তার লোভে বাংলাদেশে ব্যাপক সংখ্যায় রোহিঙ্গারা এসে ঢুকছে।

অনুপ্রবেশকারীদের সঙ্গে সৌদি আরব যে ব্যবহার করে

সৌদি আরবে রয়েছে নিতাকত নীতি। এই নীতির আওতায় বিপুল সংখ্যক অনুপ্রবেশকারী, যারা সৌদি আরবে থাকে ও কাজ করে, তাদেরকে ফেরত পাঠানো হয়। স্থানীয় মানুষের কর্মসংস্থান সুনিশ্চিত করতে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ব্রিটিশ সংবাদপত্র 'দ্য গার্ডিয়ান' জানিয়েছে, ২০১৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সৌদি আরব দমনপীড়ন চালিয়ে অন্তত আড়াই লক্ষ অনুপ্রবেশকারীকে ফেরত পাঠিয়েছে। অর মধ্যে রয়েছে ১৪০,০০০ ইথিওপিয়ার লোক। কয়েক হাজার ভারতীয়ও রয়েছে।

দুঃখজনক হল, ভারত এইভাবে অনুপ্রবেশকারীদের খাতির করে

কোনও কারণে অন্য দেশে অনুপ্রবেশকারীদের ঢুকে পড়া নতুন ঘটনা নয়। এটা যুগের পর যুগ ধরে ঘটছে। কিন্তু ভারতের ক্ষেত্রে তা খবরের শিরোনামে চলে এসেছে কারণ, বছরের পর বছর এ দেশের বিভিন্ন রাজনীতিক দল ভোটার কার্ড ও রেশন কার্ড যুগিয়ে লক্ষ লক্ষ অনুপ্রবেশকারীকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করেছে।

ভারতে অনুপ্রবেশকারীদের যেভাবে ভোটব্যাঙ্ক হিসাবে ব্যবহার করা হয়, সেটা বোধ হয় আর কোনও দেশে হয় না। অবস্থা এখন এমন জায়গায় এসে পৌঁছেছে যে, একে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করলেও আর চলবে না। কারণ অসম ও পশ্চিমবঙ্গের কিছু জেলায় বাংলাদেশিদের লাগাতার অনুপ্রবেশের জেরে স্থানীয় মানুষই নিজভূমে সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে।

অসমে স্থানীয় মানুষদের ভয় দেখাচ্ছে অনুপ্রবেশকারীরা। ফলে দু'তরফে উত্তেজনা বাড়ছে। একে কোনও অবস্থাতেই সাম্প্রদায়িক তকমা দেওয়া যায় না।

সংঘর্ষে সাম্প্রদায়িক ছাপ অযৌক্তিক

সম্প্রতি অসমে এনডিএফবি জঙ্গিদের গুলিতে ৩২ জন বাংলাদেশি মুসলিম খুন হয়েছে। একে হিন্দু-মুসলিম বিভাজনের উদাহরণ হিসাবে দেখানোর জন্য একটা অশুভ প্রচার চলছে। প্রথমেই বলে নেওয়া দরকার, এটা কোনও হিন্দু-মুসলিম বিভাজন নয়, বরং স্থানীয় মানুষ ও অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ।

বস্তুত, এনডিএফবি-র একটা অংশ, যারা এই হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে, তারা এর আগে হিন্দিভাষীদের খুন করেছিল। শুধু ২০১০ সালেই এনডিএফবি অসমে অনেক হিন্দিভাষীকে খুন করেছিল। ২০১০ সালের নভেম্বরে ১৮ জন মানুষকে তারা খুন করে, এদের অধিকাংশই ছিল হিন্দিভাষী।

২০০৮ সালের অক্টোবরে অসমে লাগাতার বোমা বিস্ফোরণে মারা যায় ৭০ জনেরও বেশি মানুষ। গুরুতর জখম হয় ৪৭০ জন। ঘটনাচক্রে এটাও ছিল হিন্দিভাষী অভিবাসী শ্রমিকদের লক্ষ্য করে শানানো আক্রমণ।

এনডিএফবি-তে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী জঙ্গিরাও আছে। ফলে পুরো ব্যাপারটাকে হিন্দু-মুসলিম দৃষ্টিকোণ দেখে দেখাটা ঠিক নয়।

১৯৭০ সাল থেকে বাংলাদেশ থেকে প্রতিনিয়ত বিপুল সংখ্যায় অনুপ্রবেশকারী ঢুকেছে। এর ফলেই অসম আন্দোলন শুরু হয়েছিল। বর্তমানে অসমের অনেক জেলাতেই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীতে ভরে গিয়েছে, যার অধিকাংশ হল বাংলাভাষী মুসলিম। এর ফলে স্থানীয় মানুষরা সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছেন এবং তাঁরা অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। এই কারণে স্থানীয় উপজাতিদের মধ্যে বাড়ছে ভারত সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ।

আসল ইস্যু হল, বাংলাদেশ থেকে রোজ লক্ষ লক্ষ অনুপ্রবেশকারীদের কি ঢুকতে দেবে ভারত?

নরেন্দ্র মোদী এই অনুপ্রবেশ ইস্যু তোলায় বিভিন্ন রাজনীতিক দল এখন একে একটা সাম্প্রদায়িক রং দিয়ে দিয়েছে। এরা অনুপ্রবেশকারীদের ভোটব্যাঙ্ক হিসাবে ব্যবহার করে লাভবান হয়েছে। একে সাম্প্রদায়িক রং না চড়িয়ে বাংলাদেশ কর্তৃক ভারতকে 'গোপন আক্রমণ' বলা যেতে পারে।

পাকিস্তান যা পারেনি, বাংলাদেশ তা করছে -- চুপিসাড়ে আক্রমণ

২০০৫ সালে অসমের তৎকালীন রাজ্যপাল লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) অজয় সিং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে একটি চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন, অসমে প্রতিদিন ছ'হাজার বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী ঢোকে। ওই বছরই শীর্ষ আদালত একটি মামলার রায় দিতে গিয়ে বলে, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ হল অসমের বিরুদ্ধে 'বহিঃশত্রুর আক্রমণ'।

দুঃখের ব্যাপার হল, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ ঠেকানোর বদলে ইউপিএ সরকার তাকে এক প্রকার মান্যতাই দিয়েছে। বিএসএফ-কে বলা হয়েছে, অনুপ্রবেশকারীদের উদ্দেশে তারা যেন গুলি না চালায়। এতে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা যে শুধু উৎসাহ পেয়ে গিয়েছে তা-ই নয়, কখনও সে-দেশের গরু চোররা বিএসএফ জওয়ানদের ধরে বেধড়ক মেরেছে। কারণ জানে বিএসএফ কিছুতেই গুলি চালাবে না।

অসমের ভূমিপুত্রদের সঙ্গে অসমীয়াভাষী মুসলিমদের কোনও সমস্যা নেই, সমস্যা বাংলাদেশিদের সঙ্গে

মনে রাখতে হবে, অসমীয়াভাষী মুসলিমদের সঙ্গে বাংলাভাষী বাংলাদেশি মুসলিমদের তফাত রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে ওরা লাখে লাখে এ দেশে ঢুকেছে। ইনস্টিটিউট ফর কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্টের অ্যাসোসিয়েট ফেলো ওয়াসবির হুসেন ২০০৪ সালে এ নিয়ে একটি তথ্যসমৃদ্ধ লেখা ছিলেন, 'অসম: ডেমোগ্রাফিক জিটারস' যা প্রকাশিত হয়েছিল 'সাউথ এশিয়া ইনটেলিজেন্স রিভিউ'-তে।

তিনি লেখেন, "২০০১ সালের আদমশুমারি অনুসারে দেখা যাচ্ছে, অসমের সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে মুসলিম জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বিশেষত ধুবড়ি, বরপেটা, করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দি জেলাতে। বোঝাই যাচ্ছে বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশের ফলে জনসংখ্যায় চরিত্রগত বদল এসেছে। সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া এবং সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর উপস্থিতি সত্ত্বেও অনুপ্রবেশ ঘটেই চলেছে।"

তিনি আরও লিখেছেন, "এই জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাব, নিরাপত্তাজনিত দিক নিয়ে আলোচনা করার আগে স্থানীয় অসমীয়াভাষী মুসলিম এবং বাংলাদেশি মুসলিমদের মধ্যে পার্থক্য বুঝে নিতে হবে। অসমীয়াভাষী মুসলিমদের শিকড় খুঁজে পাওয়া যায় প্রাক-মুঘল যুগে, ত্রয়োদশ শতাব্দীতে। রাজ্যের পূর্বাংশে চা উৎপাদনকারী জেলা যথা যোরহাট, গোলাঘাট, শিবসাগর এবং ডিব্রুগড়ে এঁদের বাস। এই জেলাগুলি বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে অনেকটা দূরে এবং এখানে অসমীয়াভাষী মুসলিমদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার খুবই কম।"

পাকিস্তান যা পারেনি, বাংলাদেশ তা করছে -- চুপিসাড়ে আক্রমণ

আজকের বাংলাদেশ এক সময় ছিল পূর্ববঙ্গ। সেখান থেকে হল পূর্ব পাকিস্তান। তার পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই করল ভারতের সহায়তা নিয়ে। এখন ওরা ভারতে মানুষ রফতানি করছে, যার ফলে এ দেশের বিভিন্ন অংশে জনসংখ্যার চরিত্রই বদলে গিয়েছে।

বাংলাদেশ নিজেদের লোকেদের সুযোগ দিতে পারছে না, ওদের নিজস্ব অনেক সমস্যা আছে। কিন্তু তার জন্য ভারত কেন দায়ী হবে? ভারতের জনসংখ্যা ১২৩ কোটি। এই বিপুল মানুষের জন্য প্রতি বছর ভারতকে অনেক সমস্যা পোহাতে হয়, প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে শুরু করে খরা, অপুষ্টি, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা ইত্যাদি। বাংলাদেশের জনগণকে দেখভালের দায়িত্ব বাংলাদেশের। ভারতের নয়। পাঁচ কোটি বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীকে ভারতে দরকার নেই।

একটা কুরুচিকর প্রচার চলছে। সেটা হল, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে কথা বলা মানেই বোধ হয় বাঙালি মুসলিমদের বিরুদ্ধে কথা বলা। এটা আদ্যন্ত ভুল প্রচার এবং অশুভ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যারা ১৯৭১ সালের পর বাংলায় এসেছে এবং ১৯৮৫ সালের পর অসমে এসেছে, ইস্যুটা তাদের নিয়ে। ১৯৮৫ সালের অসম চুক্তিতে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা আছে, কীভাবে বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশের মোকাবিলা করা হবে।

সুতরাং যতক্ষণ না ভারত একটি জাতীয় অভিবাসন নীতি প্রণয়ন করছে, যতক্ষণ না পরিষ্কারভাবে আইন তৈরি হচ্ছে, ততক্ষণ এ দেশ বাংলাদেশিদের মৃগয়াক্ষেত্র হয়েই থাকবে। ভারতের জন্য আরও খারাপ ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করে আছে। ভারত হল ভারতীয়দের জন্য, তা সে হিন্দু হোক, মুসলিম, শিখ অথবা খ্রিস্টান অথবা অন্য কোনও ধর্মের লোক হোক। কিন্তু শুধু ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতির কারণে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের তোল্লাই দেওয়া মোটেও ঠিক নয়।

চটজলদি খবরের আপডেট পান
Enable
x
Notification Settings X
Time Settings
Done
Clear Notification X
Do you want to clear all the notifications from your inbox?
Settings X