For Quick Alerts
ALLOW NOTIFICATIONS  
For Daily Alerts
Oneindia App Download

বাংলাদেশে নারীর বিপদে নারীই যখন বন্ধু

বাংলাদেশে নারীরা দৈনন্দিন জীবনে তাদের নানা সমস্যা থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজতে নিজেরাই নিজেদের সহায়তার নানা ধরনের গ্রুপ তৈরি করছেন।

  • By Bbc Bengali

ঢাকার বনশ্রী এলাকার লায়লা রিংকি সম্প্রতি অসুখে তাঁর মাকে হারিয়েছেন। সে সময় শোকে কাতর এই তরুণীর টিকে থাকার সঙ্গী হয়েছিলেন তারই এলাকার কয়েকজন বড় আপু।

যাদের কাছে নিজের কষ্টের কথা বলার সুযোগ পেয়েছেন লায়লা।

তিনি বলছিলেন, "আমি চাইলে আমার ভাইবোনের কাছেও যেতে পারতাম। কিন্তু ওরাও তো ওদের মা হারিয়েছে। আমি প্রফেশনাল কারো কাছে যাইনি কারণ তাদের সহায়তার পদ্ধতি আমার মনোপুত হয়নি। এরকম অবস্থায় শক্তি নেটওয়ার্কের এক আপু আমার কথা শুনে আমাকে প্রচুর সহায়তা করেছেন"

তিনি বলছিলেন তারই মতো কয়েক তরুণীর তৈরি শক্তি নেটওয়ার্কের কথা। যা আসলে এলাকা ভিত্তিক মেয়েদের বন্ধুত্বের নেটওয়ার্ক।

এই গ্রুপের মেয়েদের একে অপরকে সহায়তার আরেকটি নমুনা হল, একদিন সদস্যদের একজন ঢাকায় ফিরেছেন অনেক রাতে।

তার বাড়ির দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন বাড়িওয়ালা।

দৈনন্দিন জীবনে অনেক কিছুই মোকাবেলা করতে হয় নারীদের।
BBC
দৈনন্দিন জীবনে অনেক কিছুই মোকাবেলা করতে হয় নারীদের।

সেসময় তিনিও শরণাপন্ন হয়েছেন তার গ্রুপের সদস্য কোন বন্ধুর। যার বাসায় দিব্যি সেদিন রাতে আশ্রয় পেয়েছিলেন।

ঢাকার ১৩ টি এলাকায় তাদের এমন গ্রুপ রয়েছে। তাদের অনেকেই একে অপরের অজানা ছিলেন।

যারা শুধু ফেসবুকেই সীমাবদ্ধ না থেকে আড্ডা থেকে শুরু করে নানা গভীর সামাজিক সমস্যায় একে অপরের বিপদের সঙ্গী হয়ে থাকেন।

২০১৫ সালে পহেলা বৈশাখের উৎসবে প্রকাশ্যে গণহারে নারীদের যৌন হয়রানির ঘটনার পর থেকে এর যাত্রা শুরু।

কিন্তু কেন তারা এমন একটি বন্ধুত্বের নেটওয়ার্ক তৈরির প্রয়োজন বোধ করলেন? আর এটি কিভাবে কাজ করে?

লায়লা রিংকি বলছেন, "একটা জিনিস ছেলেদের মধ্যে আছে যেমন ওরা পাড়ায় একসাথে চা খায়, নামাজ পড়ে। পাড়ায় ওদের বন্ধু সংখ্যা অনেক বড়। কোন কিছু হলে ওরা এক হয়ে বলতে পারে আমার পাড়ায় এসো দেখিয়ে দেবো। কিন্তু মেয়েদের সেটা নেই। "

"তো ধরুন যদি আমার এলাকারই কোন আপুর সাথে আমার বন্ধুত্ব থাকে বা অন্য কোন এলাকায় আমি কোন বিপদে পড়লাম। ঐ এলাকায় আমাদের নেটওয়ার্কের যে আছে তার কাছে আমি ফোন দিয়ে সহায়তা চাইতে পারবো।"

অন্য জেলাগুলোতেও একই ব্যবস্থা নয় কেন? এসব ধারনা থেকেই আমরা চিন্তা করলাম এলাকা ভিত্তিক একটা বন্ধুত্বের নেটওয়ার্ক করা যায় নাকি"

বাংলাদেশে ৮০ শতাংশ নারী রাস্তায় হয়রানির শিকার হন।
AFP
বাংলাদেশে ৮০ শতাংশ নারী রাস্তায় হয়রানির শিকার হন।

যেসব বিপদের কথা লায়লা বলছেন দৈনন্দিন জীবনে অনেক কিছুই মোকাবেলা করতে হয় নারীদের।

অ্যাকশন এইডের এক সাম্প্রতিক জরিপ বলছে, বাংলাদেশে ৮০ শতাংশ নারী রাস্তায়, আর স্কুল কলেজের বাইরে প্রায় ৭০ শতাংশ নারী হয়রানির শিকার হন।

বাংলাদেশে পুলিশের হিসেবে ২০১৭ সালে দেশব্যাপী ১৫ হাজারের কিছু বেশি নারী নির্যাতনের মামলা হয়েছে।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ বলছে, ২০১৭ সালের প্রথম ১০ মাসেই বাংলাদেশে ১ হাজার ৭৩৭টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।

এগুলো শুধু কাগজে প্রকাশিত কাটখোট্টা উপাত্ত নয়। নারীদের জন্য এগুলো বাস্তব অভিজ্ঞতা।

নির্যাতন ও হয়রানি মোকাবেলায় সহায়তা, গর্ভাবস্থায় ও সন্তান জন্মদানের পর করনিয়, নারী উদ্যোক্তাদের জন্য পরামর্শ, এমনকি নারীদের মানসিক রোগের সহায়তা দেয়া, বাংলাদেশে এরকম নানা ধরনের গ্রুপ তৈরি হয়েছে যা শুধু নারীদের জন্য, নারীদেরই তৈরি।

যা চলে তাদের নিজেদেরই শ্রমে ও পয়সায়। এরকম একটি উদ্যোগ উইমেন ফর ইচ আদার।

নারীদের মনোরোগে সহায়তা দেন তারা। শুধু নারী মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের দ্বারাই।

এর প্রতিষ্ঠাতা কামরুন নাহার কলি যিনি নিজও রয়েছেন একই পেশায়।

বাংলাদেশে নারীরা মানসিক সমস্যা নিয়ে কথা বলে কম।
BBC
বাংলাদেশে নারীরা মানসিক সমস্যা নিয়ে কথা বলে কম।

তিনি বলছেন, "আমরা জানি যে জ্বর সর্দি হলে আমরা ডাক্তারের কাছে যাব কিন্তু যদি মন খারাপ হয় তাহলে কোথায় যাবো তা হয়তো জানি না। মানসিক সমস্যা নিয়ে আমাদের সমাজে অনেক প্রতিবন্ধকতা আছে। আর মেয়েরাতো এটা বলতেই পারে না। "

"তাদের জন্য বলার জায়গাটা অনেক কম। আমরা গ্রুপ তৈরি করলাম এরকম যে হয়ত কেউ একটা কথা বলতে পারছে না। কিন্তু আমি শেয়ার করলাম। আমার থেকে অন্য কেউ জেনে গেলো যে এটা থেকে পরিত্রাণের উপায় কি"

এই গ্রুপটি সরাসরি মানসিক সমস্যা বিষয়ে গ্রুপ সেশন আয়োজন করে আর সেগুলোতে পুরুষদেরও অংশ নেয়ার সুযোগ রয়েছে।

কামরুন নাহার কলি বলছেন নারীর সমস্যা শুধু নারীর একার নয়। অনেক সময় নারীর সমস্যার উৎসও পুরুষ।

পুরুষের অংশগ্রহণ ছাড়া তা মোকাবেলাও হবে না।

কিন্তু সমস্যা থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজতে নারীরা নিজেরাই নিজেদের সহায়তার এমন উদ্যোগ কেন নিচ্ছেন?

সাত বছর পার করা ফেসবুক গ্রুপ 'মেয়ে-আ সিস্টারহুড' তাদের সদস্যদের বাড়িভাড়া খুঁজতে সহায়তা করা, হঠাৎ খুব অসুস্থ হয়ে পড়া সদস্যদের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া, এমনকি কোথায় গেলে তার সাথে ঘটে যাওয়া কোন অন্যায়ের বিচারে আইনি সহায়তা পাবেন সেসব পথ খুঁজতেও সহায়তা করে।

ফেসবুকে তারা একে অপরের অভিজ্ঞতাও বিনিময় করেন। এর প্রতিষ্ঠাতা তৃষিয়া নাশতারান।

তিনি বলছেন, "আমি ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছি। আমি যখন প্রথম চাকরী খুঁজতে গিয়েছি আমাকে এমনও শুনতে হয়েছে যে এই পদের জন্য তারা কোন মেয়েকে চাচ্ছেন না। দেখা গেছে লিখিত পরীক্ষা দিয়েছি, তারপর ভাইবা দিয়েছি তারপরে এসে তারা এমন বলছে। "

"আমি তখন অনেক ছোট ছিলাম। এইগুলোর সাথে যুদ্ধ করা ঐ সময় আমার জন্য খুব কঠিন ছিল। আমি যখন মেয়ে গ্রুপটা চালু করলাম দেখা গেলো আমার মতো আরো অনেক মেয়ে আছে"

তিনি বলছেন, "একই ধরনের সমস্যায় পড়ছেন, আর তা মোকাবেলার উপায় খুঁজছেন এক সাথে বহু নারী। কিন্তু তা থেকে মুক্তির পথ খুঁজে পাচ্ছেন না।"

আর সেই হতাশা থেকেই নারীরা নিজেরাই নিজেদের জন্য উপায় তৈরি করছেন, বলছিলেন তৃষিয়া নাশতারান।

তিনি বলেছেন, "আমার ভালো মন্দ শুধু আমার উপরে কেন হবে। আমিতো আমার সমাজ রাষ্ট্র সবকিছু দিয়েই প্রভাবিত। একটা সিস্টেমই যখন আমার বিরুদ্ধে, আমি একা একটা মানুষ লড়াই করে কতটুকু বদলাতে পারবো? আমার সহযোগিতা দরকার।

"এখানে সবাইকে আসলে দায় স্বীকার করতে হবে। যেহেতু আমি সিস্টেমের মধ্যে সেই সহযোগিতাটা পাইনাই সেই কারণে আমি নিজের সুবিধাজনক সিস্টেম আমি নিজেই ডেভেলপ করে নিয়েছি।"

আর সে কারণেই হয়ত আজ লায়লা রিংকির মতো কেউ মানসিক চাপে পাড়ার কোন বড় বোনের কাছে যান।

অন্য কোন দিন হয়ত তিনি নিজেই অন্য কারোর আরো বড় কোন বিপদের বন্ধু।

English summary
When women are in danger in Bangladesh, they are friends
চটজলদি খবরের আপডেট পান
Enable
x
Notification Settings X
Time Settings
Done
Clear Notification X
Do you want to clear all the notifications from your inbox?
Settings X