এ এক অন্য দুর্গা-কথা! শত আলোর রোশনাইয়ের মাঝে রয়েছে অন্ধকার আর বাঁচার লড়াই
রাস্তায় লাখো মানুষের জনস্রোত। আর এই কলকাতার বুকেই প্রদীপের আলোর নিচে অন্ধকারের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে হাজারো 'দুর্গা'। পুজোর দিনগুলোতে সবাই যখন মেতে ওঠে আনন্দে, তখন ওই দুর্গা-রা ব্যস্ত থাকে জীবনযুদ্ধে
আমার দুর্গা পুজোর সময়ও পরের বাড়ি খাটে! আমার দুর্গা ঘুরে ফেরে গঞ্জে-গ্রামে-হাটে! আমার দুর্গা নিশ্বাস নেয় রাত পুরুষের সাথে! আমার দুর্গা পান্তা দেয় আদুল ছেলের পাতে! আমার দুর্গা আকাশ ভেজায় দুটি চোখের সাথে! আমার দুর্গা হেসেই চলে পেটের জ্বালায় রাতে......!
কথাগুলো কোথাও গিয়ে যেন মিলে যায়। বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো। গোটা বাংলা তাই ব্যস্ত তাদের প্রিয় দুর্গোৎসব পালনে। শহর জুড়ে আলোর রোশনাই। তিলোত্তমা দুর্গাপুজোর আনন্দে মেতে উঠেছে দ্বিতীয়া থেকেই। শহরের বস্তি এলাকা থেকে অট্টালিকায় এখন শুধুই আলোর ছটা। নতুন জামাকাপড়, খাওয়া-দাওয়া, ঘুরে-বেড়ানো, যে যেমন খুশি ফুর্তিতে মেতে উঠেছেন।
রাস্তায় লাখো মানুষের জনস্রোত। আর এই কলকাতার বুকেই প্রদীপের আলোর নিচে অন্ধকারের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে হাজারো 'দুর্গা'। পুজোর দিনগুলোতে সবাই যখন মেতে ওঠে আনন্দে, তখন ওই 'দুর্গা'রা ব্যস্ত থাকে জীবনযুদ্ধে বেঁচে থাকার লড়াই চালাতে। তাদের দেখেই সমাজ শিখতে পারে জীবনের লড়াই কাকে বলে!
উত্তর কলকাতায় দেখা মিলল এমনই এক দুর্গা-র। জগৎ মুখার্জি থেকে আহিরিটোলা যেতে গেলে দেখা যাবে বছর সাতেকের দুর্গাকে। ছোটখাটো শরীর, রুক্ষ চুল। সে একটা দড়ির ওপর হেঁটে চলেছে নিজের খেয়ালে। আবার কখনও দড়ির ওপর থালা রেখে তাতে শূন্যে ভেসে দড়ির এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে অনবরত চলাফেরা করছে সে। পাশেই নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে রয়েছে দুর্গার তিন ভাইবোন।
এদিক ওদিক থেকে যা পয়সা উড়ে আসছে, দুর্গার মা সেগুলো কুড়িয়ে রাখছেন একটা থালায়। দুর্গাকে জীবনের বাজি রেখে শূন্যে ভেসে দড়ির এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে অনবরত হাটতে বা থালায় বসে যেতে যাতায়াত করতে দেখলেই মনে পড়ে যায় বাংলার গর্ব স্বপ্না বর্মন বা অলিম্পিকে সোনাজয়ী আগরতলার ২৪ বছরের জিমন্যাস্ট দীপা কর্মকারের কথা।
কিন্তু না, দুর্গার এই লড়াই অলিম্পিকে সোনা জেতার লড়াই না। রূপো বা ব্রোঞ্জ পেতেও দড়ির ওপরে হাঁটছে না সে। এটা জীবনের অলিম্পিকে বেঁচে থাকার লড়াই। সামান্য দুটো পয়সার জন্য নিজের জীবনকে বাজি রেখে লড়াই। মাথার ওপর ছাঁদ নেই। খোলা আকাশের নিচে বসবাস। চারভাই বোনকে নিয়ে টিকে থাকার লড়াই। তাই দুর্গাপুজোয় যখন গোটা বাংলা মেতে উঠেছে তখন দুর্গার আশা, দু'পয়সা রোজগার করে পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে। সেই আশা নিয়েই খেলা দেখিয়ে চলেছে সে।