যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে হিটলারি কায়দায় পুলিশি হামলা, আলো নিভিয়ে শ্লীলতাহানি
আরও
পড়ুন:
এশিয়ার
সেরা
১০০:
বাংলা
থেকে
জায়গা
পেল
যাদবপুর
বিশ্ববিদ্যালয়
আরও
পড়ুন:
যাদবপুর
বিশ্ববিদ্যালয়ের
ছাত্রাবাসে
জোর
করে
টেনে
এনে
ছাত্রীর
শ্লীলতাহানি,
মারধর
কিছুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে কয়েকজন ছাত্র তাদেরই এক সহপাঠিনীর শ্লীলতাহানি করে বলে অভিযোগ উঠেছিল। অস্থায়ী উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী তার তদন্তে একটি কমিটি গড়েন। কিন্তু ছাত্রছাত্রীরা অভিযোগ করেন, ওই কমিটি পক্ষপাতদুষ্ট। তারা একপেশে তদন্ত করে দোষীদের আড়াল করতে চাইছে। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যালয় অরবিন্দ ভবনের সামনে শুরু হয় অবস্থান বিক্ষোভ। গত কয়েকদিন ধরে চলছিল এই লাগাতার অবস্থান। এর জেরে তপ্ত হয়ে উঠেছিল ক্যাম্পাস।
পড়ুয়াদের অভিযোগ, উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার গতকাল বিকেলে এসে হুমকি দেন, অবিলম্বে বিক্ষোভ প্রত্যাহার না করলে 'দেখে নেওয়া' হবে। কিন্তু ছাত্রছাত্রীরা তাঁদের আন্দোলন চালিয়ে যান।
এর পরই রাত দু'টো নাগাদ অরবিন্দ ভবনে আসে বিরাট পুলিশবাহিনী। সঙ্গে সাদা পোশাকের কিছু লোক। এরা যাদবপুর-বাঘা যতীন অঞ্চলের তৃণমূলের গুন্ডা বলেই দাবি করেছেন ছাত্রছাত্রীরা। তারা জিন্সের প্যান্টের ওপর গেঞ্জি পরেছিল। পায়ে ছিল হাওয়াই চটি। হাতে মোটা লোহার বালা। প্রথমে শুরু হয় গালিগালাজ। তার পর সব আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়। অন্ধকারে কয়েকজন ছাত্রীকে টেনে নিয়ে যাওয়া হয় থামের আড়ালে। সেখানে যথেচ্ছভাবে তাঁদের শ্লীলতাহানি করা হয় বলে অভিযোগ। ছাত্রীদের আর্ত চিৎকার শুনে ছাত্ররা যখন তাঁদের বাঁচাতে যান, তখন শুরু হয় পুলিশের মার। এক-একজন ছাত্রকে চার-পাঁচজন পুলিশ ঘিরে ধরে। পেটে, মুখে লাথি মারা হয়। লাঠির ঘা পড়ে পিঠে, মাথায়। ঝরঝর করে রক্ত পড়তে থাকে। পুলিশ-গুন্ডাদের সম্মিলিত হামলায় জখম হয়েছেন বহু ছাত্রছাত্রী। এদের মধ্যে দু'জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
পুলিশের সঙ্গে সাদা পোশাকে এসেছিল শাসক দলের গুন্ডারা, বিস্ফোরক অভিযোগ পড়ুয়াদের
পড়ুয়াদের অভিযোগ, ছাত্রীদেরও নির্বিচারে পিটিয়েছে পুলিশ। সঙ্গে কোনও মহিলা পুলিশকর্মী না থাকলেও ছাত্রীদের টেনে-হিঁচড়ে ভ্যানে তোলে পুরুষ পুলিশকর্মীরাই, যা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নির্দেশিকার বিরুদ্ধে। রাতেই ৩৭ জনকে গ্রেফতার করে নিয়ে গিয়ে থানার লক-আপে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।
রাতে এই হামলার খবর পেয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকরা ছুটে যান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। শাসক দলের গুন্ডারা সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হয় বলে অভিযোগ। পুলিশের সামনেই তাঁদের নিগ্রহ করা হয়।
বুধবার সকাল থেকেই ফের বিক্ষোভ শুরু করেছেন পড়ুয়ারা। তাঁরা উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর করেছেন। উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে। ছাত্রদের পাশাপাশি উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেছে জুটা বা যাদবপুর ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন-ও। এ দিন সকালে যাদবপুর থানার সামনে রাজা সুবোধ মল্লিক রোডে অবরোধে বসেন ক্ষুব্ধ পড়ুয়ারা। পুলিশের বড়কর্তারা এসে ঘটনার তদন্তের আশ্বাস দিলে অবরোধ উঠে যায়। তবে উপাচার্য না সরা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস বয়কট চলবে বলে জানিয়েছেন ছাত্রছাত্রীরা। পুলিশি নিগ্রহের প্রতিবাদে আগামীকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার রাজ্য জুড়ে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে এসএফআই।
বুধবার বিকেলে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গোলপার্ক পর্যন্ত প্রতিবাদ মিছিল করেন ছাত্রছাত্রীরা। মিছিলে পা মেলান অসীম চট্টোপাধ্যায়, কৌশিক সেন, সমীর আইচ প্রমুখ বিশিষ্টজন।
অভিযোগ উঠেছে, উপাচার্যই পুলিশ ডেকেছেন ক্যাম্পাসে। এর নিন্দায় সরব হয়েছে শিক্ষা মহল। বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস সবাই এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে।
রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, "শুনলাম, মেয়েদের জামাকাপড় ছিঁড়ে দিয়েছে পুলিশ। তা যে পুলিশকর্মীরা এ সব করল, তাদেরও তো ঘরে মেয়ে আছে, বোন আছে। এই লজ্জা ওরা কোথায় রাখবে। এখন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের যিনি উপাচার্য আছেন, তিনি ওই পদে বসার অযোগ্য। উপাচার্য নয়, উনি তৃণমূলের মুখপাত্র হিসাবে কাজ করছেন।"
আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ বলেন, "এখনকার উপাচার্য শেষ কবে ক্লাস নিয়েছেন, জানি না। রাতের অন্ধকারে পুলিশ ঢুকে মেয়েদের সঙ্গে অসভ্যতা করছে, এটা কোনও ভদ্র সমাজে অভাবনীয় ঘটনা।"
কবি শঙ্খ ঘোষ পুলিশের হামলা নিয়ে বলেছেন, "লজ্জায় আর ঘৃণায় আমার মন ভারাক্রান্ত হয়ে গিয়েছে। এ-ও কি সম্ভব?"
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী তথা সমাজকর্মী শাশ্বতী ঘোষ বলেন, "নন্দীগ্রামে পুলিশের সঙ্গে ছিল গুন্ডারা। এখানেও তাই। শাসক বদলালেও বদলায়নি দণ্ডদানের পদ্ধতি।"