ইছামতীতে এবারও বাজবে না মিলনের সুর, নিরাপত্তার কারণে বিসর্জন হবে নিজ-নিজ জলসীমান্তে
এবারেও বিজয়া দশমীতে ইছামতীর বুকে মিলবে না দুই বাংলার নৌকা। দুই দেশের সৌভাতৃত্বের বন্ধন অটুট থাকলেও ইছামতীতে জল সীমান্ত অতিক্রম করে মিলিত হতে দেখা যাবে না দুই দেশের মানুষকে।
এবারেও বিজয়া দশমীতে ইছামতীর বুকে মিলবে না দুই বাংলার নৌকা। দুই দেশের সৌভাতৃত্বের বন্ধন অটুট থাকলেও ইছামতীতে জল সীমান্ত অতিক্রম করে মিলিত হতে দেখা যাবে না দুই দেশের মানুষকে। দু'দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যৌথ সিদ্ধান্তে ঠিক হয়েছে, 'ইছামতীতে দুই বাংলার বিসর্জন হলেও কেউ জল সীমান্ত অতিক্রম করবে না।'
থাকছে দুই দেশের প্রশাসনের কঠোর নজরদারি। নদীর মাঝ বরাবর ঘেরা থাকবে বিএসএফ ও পুলিশের যৌথ বেষ্টনীর নিরাপত্তা। অন্যদিকে বাংলাদেশের তরফেও থাকবে বিজিবির কঠোর নজরদারি। বাংলাদেশের বিজিবি ও ভারতের সীমান্ত রক্ষা বাহিনী ও পুলিশ টহল দেবে।
গত ১৩ অক্টোবর ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের উত্তর ২৪ পরগনার টাকিতে পিএইচই ভবনে বিসর্জন নিয়ে দুই বাংলার প্রশাসনের যৌথ বৈঠকেই এই সিদ্ধান্ত হয়। বিবিজি ও বিএসএফ এর আধিকারিকরা, টাকি পুরসভার চেয়ারম্যান মুখোপাধ্যায়, ভাইস চেয়ারম্যান আজিজুল গাজী, হাসনাবাদের ভিডিও সহ অন্যান্যরা। ফলে বিসর্জন ঘিরে উন্মাদনা থাকলেও দুই বাংলার মিলনের ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটবে না। বিসর্জনের দিন শুক্রবার বিকেল ৩ থেকে ৬টা বিসর্জন হবে দুই বাংলার। নৌকা নামবে কিন্তু মিলন হবে না।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ ২৫০- ৩০০ বছর ধরে ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের উত্তর ২৪ পরগনার টাকিতে ইছামতী নদীতে ভাসান উপলক্ষে মিলেমিশে একাকার হয়ে এসেছে দু'বাংলা। ভাসান উপলক্ষে বছরের এই একটা দিন একত্রিত হতে পারত একপারে টাকি, হাসনাবাদ, বসিরহাট, হিঙ্গলগঞ্জ আর ওপারে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার বেশ কয়েকটা জায়গার মানুষ। বাংলাদেশের ঘলঘলে, শ্রীপুর, পারুলিয়ার মতো গ্রাম ছাড়াও এই ভাসানে অংশ নিতেন ঢাকা থেকে আসা মানুষও। পরস্পরকে উপহার দেওয়ার মাধ্যমে গড়ে ওঠত এক অনাবিল সৌহার্দ্যের পরিধি।২০১১ পর্যন্ত এইভাবেই মিলেমিশে গেছে দুই বাংলা।
কিন্তু ২০১১-য় প্রশাসনের শিথিলতায় প্রচুর অনুপ্রবেশ ঘটে ভারত সীমান্তে। এবং ওই সালেই ইছামতীর ভাসান দেখতে এসে নদীতে নৌকা উল্টে মৃত্যু হয় সুজয় দাস নামে যাদবপুরের এক গবেষকের। অনুপ্রবেশের জেরেই চুরি ডাকাতির ঘটনা বেড়েছিল বলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতর এবং রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন টাকির বাসিন্দাদের। যার ফলস্বরূপ ২০১২ থেকে সীমান্তে কড়াকড়ি বেড়ে যায়। পরে বন্ধ হয়ে যায় বিসর্জন পর্ব।