৪০০ বছর ধরে রাজ পরিবারকে তাড়া করছে এক 'অভিশাপ'! মাইসোর প্যালেস ও তালাকাডের অজানা কিছু তথ্য
কাহিনির সঙ্গে কোনও কোনও ক্ষেত্রে জড়িয়ে যায় এক করুণ বাস্তব। আর কাহিনির সঙ্গে বাস্তব মিলে যাওয়াটাই বিস্ময় তৈরি করে।
কাহিনির সঙ্গে কোনও কোনও ক্ষেত্রে জড়িয়ে যায় এক করুণ বাস্তব। আর কাহিনির সঙ্গে বাস্তব মিলে যাওয়াটাই বিস্ময় তৈরি করে। ইতিহাস এরকম বহু কাহিনির সাক্ষী হয়ে রয়েছে , যার ঘটনা আজও শুনলে গা কাঁটা দেয়! এরকমই এক কাহিনি কর্ণাটকের মাইসোরের রাজ পরিবার তথা ওয়েদিয়ার পরিবারের। যে পরিবার গত ৪০০ বছর ধরে এক অদ্ভুত অভিশাপ মাথায় নিয়ে চলছে, যা ঘিরে মানুষের কৌতূহলের কর্মেই বাড়ছে।
[আরও পড়ুন:জেনে নিন মাইসোরের বিশ্বখ্যাত 'দশেরা' উদযাপনের অজানা তথ্য, ইতিহাস]
কী ছিল সেই অভিশাপ? কেনই বা পরিবারের ওপর এল এঅ অভিশাপ? দেখে নেওয়া যাক।
[আরও পড়ুন:রাজস্থানের এইসব জায়গায় আজও লুকিয়ে বহু রহস্য, গা ছমছমে বহু ঘটনা জানুন ফোটোফিচারে]
ওয়েদিয়ার রাজাদের কাহিনি
মাইসোর প্যালেস ওয়েদিয়ার রাজবংশের। কিন্তু এই তাক লাগানো প্যালেসে আজও ফিশ ফিশ করে কথা বলে নানা ইতিহাস। রাজ বংশকে তাড়া করে বেড়ায় এক অভিশাপ। গত ৪০০ বছর ধরে তা তা়ডা করছে।
রক্তাক্ত ইসিহাস
১৬১২ খ্রীষ্টাব্দে বিজয়নগর সাম্রাজ্য দখল করে ওয়েদিয়াররা। সেই সময়ে মাইসোরের রাজা ছিলেন থিরুমালারাজা। তাঁকে হত্যা করে এই সিংহাসন দখল করা হয়। মাইসোরের কাছে কেসেরর যুদ্ধে থিরুমালারাজাকে হত্যা করা হয়।
অলঙ্কারের লোভ!
শোনা যায়, থিরুমালা রাজাকে হত্যার নেপথ্য কারণ ছিল সেই রাজপরিবারের বহুমূল্য অলঙ্কার। রাজা ওয়েদিয়ারের লোভ কর্ণাটকের শ্রীরঙ্গপত্তনার আদি রঙ্গা মন্দিরের দেবীর গয়নার ওপরেও ছিল বলে কিছু মানুষের দাবি।
গয়না ছিল কার কাছে ?
কিন্তু সেই মন্দিরের গয়না থিরুমালা রাজার মৃত্যুর পরও রাজরানি তথা থিরুমালা রাজার স্ত্রী অলমেলাম্মার কাছে ছিল। শোনা যায়, সেই গয়না নেওয়ার জন্য রাজরানি অমলেআম্মাকে হেনস্থা করতে থাকেন ওয়েদিয়ার রাজা।
রাজপরিবারের ইতিহাস ও তালাকাড
এদিকে, কথিত রয়েছে, মাইসোরে বন্দি অবস্থা থেকে কোনও রকমে গয়না নিয়ে পালিয়ে যান রাজরানী অলমেলাম্মা । কর্ণাটকে মাইসোরের কাছে তালাকাডে গিয়ে তিনি আশ্রয় নেন। এই এলাকা কাবেরী নদীর তীরবর্তী এলাকা হিসাবে বিখ্যাত।
ধাওয়া করা হয় রাজরানীকে!
এরপর ওয়েদিয়ারদের সৈন্যরা তালাকড় পর্যন্ত ধাওয়া করে রাজরানী অলমেলাম্মাকে। সেই সময়ে ধরা পড়ার ভয়ে কাবেরীর প্রচণ্ড ঘুণিতে ঝাঁপ দেন অলমেলাম্মা।আর মৃত্যুকালে উচ্চারণ করেন এক অভিশাপ, তিনি বলেন' কাবেরীর মালাঙ্গিতে আসুক ব্যাপক ঘূর্ণি, তালাকাড মরুভূমিতে পরিণত হোক আর মাইসোরের ওয়াড়িয়রদের বংশে কখনও উত্তরসূরি জন্ম নেবে না।'
এরপর যা হয়
বর্তমানে তালাকাড়ে কাবেরীর তীরবর্তী অংশ বালিতেই ঢেকে রয়েছে। কাবেরীর মালাঙ্গিতে এখনও রয়েছে প্রবল ঘুর্ণি। এদিকে, গত ৪০০ বছর ধরে অভিশাপের বশবর্তী ওয়েদিয়ারদের রাজপরিবার এক প্রজন্ম পর পর পুত্র সন্তানের জন্ম দিচ্ছে। যা রীতিমত অবাক করে অনেককেই। এই বংশের রাজা কৃষ্ণরাজা ওয়েওদিয়ারের কোনও সন্তান ছিল না। এরপর তিনি নিজের ভাগ্নেকে রাজমসনদে বসিয়ে দেন। সেই ভাগ্নের পুত্র সন্তান জন্মালেও তাঁর ছেলে অর্থাৎ শ্রাকান্ত দত্তের কোনও সন্তান জন্মায়নি।
ঐতিহাসিকরা যা বলছেন
বিভিন্ন ঐতিহাসিকদের দাবি, ওয়েদিয়ার রাজপরিারের ইতিহাস দেখলে দেখা যাবে, ১৭শ শতক থেকে ৬ জন রাজা নিজেদের ভাগ্নেকে পুত্র হিসাবে দত্তক নিয়ে রাজবংশ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ করে চলেছেন। তবে অভিশাপের সঙ্গে এর মিল নিয়ে মুখ কেউই খুলতে চাননি।
বেড়ানোর জায়গা
তালাকাড ও মাইসোর কর্ণাটকের দুটি বিখ্যাত ট্যুরিস্ট স্পট। যে দুটি জায়গাতেই ইতিহাস নিজেকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে রেখেছে। এই দুটি জায়গা বেড়ানোর আগে যদি এই করুণ ইতিহাস জানা যায়, তাহলে এই জায়গাগুলি বেড়ানোর প্রাসঙ্গিকতা আরও বাড়বে বৈ কি!