মহার্ঘ ভাতা, জনসংযোগ, জয় বাংলা -- বিজেপির মোকাবিলা করতে কী না করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
দু হাজার ঊনিশের লোকসভা নির্বাচনে দল প্রত্যাশিত ফল না করার পরে যথেষ্ট চাপে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
দু হাজার ঊনিশের লোকসভা নির্বাচনে দল প্রত্যাশিত ফল না করার পরে যথেষ্ট চাপে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাঁচ বছর আগেরকার তুলনায় তৃণমূল কংগ্রেসের আসন সংখ্যা কমে গিয়েছে ১২টি আর সেখানে বিজেপির বেড়েছে ১৬টি। দু'টি দল এখন প্রায় সমান সমান (২২-১৮) যার অর্থ তাঁর নিজের ডেরায় মমতা বিজেপির উত্থান আটকাতে ব্যর্থ হয়েছেন এ যাবৎ। আর সেই কারণেই এবারে তিনি বহুমুখী কৌশল নিয়ে নেমেছেন আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে হারানো জমি উদ্ধার করতে।
মহার্ঘ ভাতা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন মমতা; কিন্তু চাপের নাম বাবাজি
একদিকে মমতা সরকার মহার্ঘ ভাতা ইস্যুতে বিব্রত। দলের সূত্রের খবর, প্রায় ৭০ লক্ষ ভোট এবারে বিজেপির দিকে চলে গিয়েছে কারণ মমতা রাজ্য সরকারের কর্মীদের ভাতার প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি। একদিকে যখন কেন্দ্রীয় কর্মীদের মহার্ঘ ভাতা বেড়েছে হু-হু করে, রাজ্য সরকারের কর্মীদের বকেয়া না মেটানোতে ক্ষোভ বেড়েছে এবং নির্বাচনে ক্ষতির মুখ দেখেছে তৃণমূল। পাশাপাশি, নির্বাচনের পরে রাজ্য পুলিশের সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগও তুলেছেন দলের বিভিন্ন নেতা-মন্ত্রীরা। পুলিশ নাকি তাঁদের কথা শুনছে না -- এমন গুরুতর অভিযোগ ওঠার পর খোদ মুখ্যমন্ত্রী, যিনি কিনা পুলিশমন্ত্রীও বটে, উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। এমনকি পরে একটি জনসভাতে বলেন যে তাঁর কথাও পুলিশ শুনছে না। আর এসবের পাশাপাশি রয়েছে তৃণমূলের নানা স্তরের কর্তা-হোতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও।
প্রশাসক হিসেবে নানা পন্থা নিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী
প্রশাসনিকভাবে এই সমস্ত বিপর্যয়ের মোকাবিলা করার জন্যে মমতা মাঠে নামেন। সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি আসছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে বিশেষ সেল তৈরী করেন। দলের নানা নেতাদের নির্দেশ নেন 'কাটমানি' নিয়ে থাকলে তা ফেরত দিতে। তাছাড়া, পুলিশের জন্যে বোনাস-এরও ব্যবস্থা করেন মমতা। কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে বলেন এমন ব্যবস্থা করতে যাতে সরাসরি মানুষ তাঁদের ক্ষোভের কথা তাঁকে বলতে পারেন। এমনকি, জল সংরক্ষণ ইস্যুতেও মমতা রাস্তায় নামেন, লক্ষ্য ছিল জনসংযোগ বাড়ানো।
এমনকি সংরক্ষণের ডাকও দিচ্ছেন
এখানেই শেষ নয়। গত জানুয়ারি মাসে কেন্দ্রের মোদী সরকার অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া উচ্চ জাতির সংরক্ষণের কথা বললে মমতা সে প্রসঙ্গে প্রশ্ন তুললেও জুলাইতে তাঁর সরকার অর্থনৈতিকভাবে দুর্বলদের জন্যে সেই একইরকম সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেয় -- কর্ম এবং শিক্ষাক্ষেত্রে।
বাঙালি খণ্ডজাতীয়তাবাদকে উস্কে দিচ্ছেন বিজেপির মোকাবিলায়
এ তো গেল প্রশাসনিক, রাজনৈতিক দিক। রাজ্যে বিজেপির উত্থান ঠেকাতে মমতার দল জোর দিচ্ছে বাঙালি খণ্ডজাতীয়তাবাদের উপরেও। "জয় শ্রীরাম" এর পাল্টা হিসেবে "জয় হিন্দ, জয় বাংলা" স্লোগান তোলা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী জোর দিয়েছেন রাজ্যে থাকতে গেলে বাংলা বংশ আত্মস্থ করার উপরেও। যদিও এই বাঙালি খণ্ডজাতীয়তাবাদের প্রচার মমতা এই প্রথম করছেন তা নয়। আট বছর আগে তিনি প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পরেও নানা দিক থেকেই বাঙালিয়ানা জাহির করার ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছিলেন নেত্রী। বাঙালি মনীষীদের জন্মদিন স্মরণ করা থেকে ছবিতে মাল্যদান বা বিশ্ব বাংলা-র মতো বাঙালিয়ানার প্রতীকের বিবর্তন -- এসবই তাঁর আইডেন্টিটি পলিটিক্স-এর অঙ্গ। কিন্তু এযাবৎ এসবের সুফল না পেলেও বিজেপির নিজস্ব আইডেন্টিটি পলিটিক্সের মোকাবিলায় মমতা এবং তাঁর দল আরও কোমর বেঁধে নেমেছে।
কিন্তু শেষরক্ষা হবে কি?